নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়ক এ কাদের স্কুলসংলগ্ন মেধাবী অরুপ রতন পাল (২৩) ছোটবেলা থেকেই মায়োপ্যাথী রোগে আক্রান্ত। পা দুটি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় হামাগুড়ি দিতে দিতে বড় হয় সে। তবে সে অক্ষমতার কাছে হার মানেনি। সে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট অরুপ বর্তমানে বরিশাল চৌমাথা লেকসংলগ্ন বরিশাল ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজের সিএসই বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের মেধাবী ছাত্র। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থী ছোটবেলায় হামাগুড়ি দিয়েই বিদ্যালয়ে যেত। যখন থেকে পৃথিবীটাকে বুঝতে শুরু করা ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। এখন কঠিন এ রোগে তার হাত দুটোও অচল হবার উপক্রম।
পড়ালেখার খরচ নিয়ে হিমশিম খেতে হয় তার পিতাকে বিধান চন্দ্র পালকে। পেশায় সে একজন শিক্ষক। বরিশাল নাইট স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষক ৩০ বছর তার শিক্ষকতা জীবনে অনেক শিক্ষার্থীকে বিদ্বান হতে সাহায্য করেছেন, তবে বর্তমানে অর্থের কারণে নিজের সন্তানটিকে নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পিতা বিধান চন্দ্র পাল তবুও দমে যাননি। টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। অরুপের পিতার সামান্য উপার্জন দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছে।
মেধাবী অরুপ রতন পাল (২৩) ২০১৩ সালে বরিশাল সরকারি জিলা স্কুল থেকে এসএসসি তে জিপিএ ৫ এবং ২০১৫ সালে বরিশাল সরকারি অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় হতে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে বরিশাল ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র। বিগত সময়ে সে অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার রোগের কাছে হেরে যাচ্ছে অরুপ। বর্তমানে সে বিছানা থেকে উঠার জন্য ও সাহায্য নিতে হচ্ছে আরেকজনের। তার এই রোগের কারণে তার একমাত্র লেখার সম্বল হাতটিও অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
লেখার সময় হাতটি নিচে পড়ে গেলে আর উপরে উঠাতে পারে না। ফলে পরীক্ষার সময় তার সঙ্গে দেখাশোনার জন্য একজন থাকতে হচ্ছে সর্বদা। অরুপের প্রশ্ন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও ভিক্ষা না করে পড়াশোনা করেছি এটা কি আমার অপরাধ? রাষ্ট্রের কাছে আমি তো ভিক্ষা চাই না, আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমি বড় হতে চাই সে জন্য প্রয়োজন সাহায্য ও সহযোগিতার। আমার যাতায়াত ব্যবস্থা ও লেখাপড়ার জন্য বর্তমানে সাহায্যের প্রয়োজন। যদি সরকার আমার লেখাপড়ার জন্য একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত তাহলে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতাম।’ তার পিতা বলেন, ‘অরুপ শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তার মানসিক শক্তি অনেক। কম্পিউটার ব্যবহারেও সে পারদর্শী।
অত্যন্ত মেধাবী এই ছেলেটার পাশে সমাজের সকলের দাঁড়ানো উচিত।
অরুপ মেধাবী ছাত্র হয়েও যদি সাহায্য না পায়, তাহলে অন্য প্রতিবন্ধী যারা পড়ালেখা করে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন দেখা ভুল হয়ে যাবে।’ বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের নিকট সাহায্যের হাত সর্বদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন যদি আমার সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্বভার সরকারের পক্ষে নেয়া যেত তাহলে মেধাবী অরুপের মতো হাজারো প্রতিবন্ধী লেখাপড়া করে শিক্ষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতো।