বরিশালেও প্রার্থী বদলের দাবি বিএনপিতে

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০১৩ সালের বিজয়ী দুই প্রার্থীকে বিএনপি পাল্টে দেয়ার পর বরিশালে কী হয়, তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এই মহানগরে পাঁচ বছর আগে নির্বাচিত আহসান হাবীব কামালকে নিয়ে বিএনপিতে বিভেদের আভাস স্পষ্ট।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে পাঁচ মহানগরে ভোট হবে তার মধ্যে প্রথম দফায় হচ্ছে গাজীপুর এবং খুলনায়। ১৫ মে এই ভোট শেষে ঈদের পর রাজশাহী বরিশাল ও সিলেটে হবে ভোটের তফসিল।

আপাতত গাজীপুর ও খুলনার দিকে দেশবাসীর দৃষ্টি থাকলেও যে তিন নগরে ভোটের প্রস্তুতি চলছে, সেসব এলাকায় নেতা-কর্মীরা নানা হিসাব কষতে ব্যস্ত।

প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে মনোনয়নের জন্য চলছে নেতাদের চেষ্টা, তদবির। সেই সঙ্গে চলছে গণসংযোগ।

২০০৮ সালে বরিশালে বিজয়ী আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হীরনকে ২০১৩ সালে ২২ হাজার ভোটে হারিয়ে মেয়র হন আহসান হাবীব কামাল।

বর্তমান সরকারের আমলে মহানগরগুলোতে বিএনপির মেয়ররা মামলা সাময়িক বরখাস্তের খড়্গে পড়লেও সে তুলনায় নিরাপদেই ছিলেন বরিশালের কামাল।

এই বিষয়টি নিয়ে বিএনপিকে কামালকে নিয়ে কিছুটা সন্দেহ, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। দলের একটি অংশ প্রকাশ্যেই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মসূচিতে তাকে নানাভাবে লাঞ্ছনার চেষ্টাও হয়েছে।

জেলা বিএনপির একটি বড় অংশই গাজীপুর এবং খুলনার মতো বরিশালেও প্রার্থী পাল্টানোর পক্ষে। তারা সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারকে আবার মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলছেন।

তবে মেয়র কামাল আশা করছেন, দলীয় প্রতীকে ভোটেও তাকেই প্রার্থী করবে দল। আর মনোনয়ন পেলে গতবারের চেয়ে বেশি ভোটে জয় আশা করছেন তিনি।

কামাল বলেন, দল যদি মনোনয়ন দেন তাহলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আর দলের নেতাকর্মীরা যেসব অভিযোগ করেছেন সেগুলো সঠিক নয়।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন, বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিণ, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনও কেন্দ্র দেন দরবার করছেন।

প্রার্থী হতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিনও।

তিনি বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করছি। দল যা করবে তাই মেনে নেব। এই জন্য দ্বন্দ্বের প্রশ্ন আসে না।’

বিলকিস আক্তার জাহান শিরিণ বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করেছি, করব। দল কখনোই নিরাশ করবে না। বিএনপির প্রার্থিতা পেলে আওয়ামী লীগের সামনে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড়াতে পারব বলে মনে করি।’

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘প্রার্থী কে হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ আছে। সরকার সকল জায়গায় প্রভাব খাটায়। এই নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

বিএনপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ২০০৩ সালে বরিশালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন সরোয়ার। তবে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। আর সে সময় বিএনপির একাধিক প্রার্থীর সুযোগে জিতে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ।

এমনিতে বরিশাল সদর আসন বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু হীরন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের অবস্থান যে শক্তিশালী হয়েছে, সেটা ২০১৩ সালের নির্বাচনেই স্পষ্ট। আগের নির্বাচনে বিএনপির তিন প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগিতে জিতেছিলেন হীরন। আর ২০১৩ সালে বিএনপিতে ছিল একক প্রার্থী। আর তার কাছে হীরনের হার হলেও আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পান তিনি।

গত পাঁচ বছরে মেয়র কামালের কাজ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে প্রশ্ন আছে। এমনটি তার দল বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও যে খুব একটা সন্তুষ্ট তা নয়।

বরিশাল যুবদলের এক নেতা বলেন, ‘মেয়র কামাল পাঁচ বছর পদে থাকাকালে দলের কাজে অংশ নেননি। কোনো কর্মসূচিতেই তাকে পাওয়া যায় না। এই সময়ে তিনি নিজের আর নিজ পুত্রের জন্য কাজ করেছেন। দলের জন্য তার ত্যাগ শূন্য।’

আরেক আলোচিত প্রার্থী বিলকিস জাহান শিরিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তার ওই যুবদল নেতা বলেন, ‘তিনি তো সব সময় ঢাকায়ই থাকেন। তবে তিনি বিএনপির একজন শক্ত প্রার্থী সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

মহানগর বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘সব কিছুই এখন নির্ভর করছে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের উপর। বরিশাল সিটি নির্বাচনে একজন শক্ত প্রার্থী দরকার।’