মেয়র শওকত হোসেন হিরন
#

সোহেল আহমেদ.

তখন আমি বরিশালের জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকায় কাজ করি। বরিশাল সিটির মেয়র নির্বাচনে শহড়ে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যে যার মত প্রচারনায় চষে বেড়াচ্ছেন শহর এলাকা। তার মধ্যে একজন প্রার্থী (নেতা)’র প্রচারনার সংবাদ সংগ্রহের দ্বায়ীত্ব ছিলো আমার।

নেতা নগরীর ২৯,৩০ নং ওয়ার্ডে প্রচারে নামলেন। সাথে ভিপি আনোয়ার,এ্যড.বলরাম পোদ্দার সহ মহানগর সহকর্মী রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নেতাকে কঠিন ভালোবাসা কাশীপুর ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম হাওলাদার,মামুন মাস্টার, কবির আহমেদ পোষা,শ্রী গোপাল চন্দ্র শীল,আমির হোসেন,নাছির হোসেন,সৈয়দ মনির হোসেন, মো: সাইফুল ইসলাম,মো: সুমন মীর,সৈয়দ সৈয়দ জামাল হোসেন,আবুল হাসেম,জাহাঙ্গীর সিকদার, আবদুল বারেক পোঞ্চাইত,হাবিবুর রহমান মেম্বার সহ নাম না জানা শত শত কর্মি সমর্থক নেতার প্রচারনায় অংশ নেয়। গ্রাম্য সমর্থকদের প্রচারের তিব্রতা এতোই বেশি ছিলো যে নেতাকে এবার বিজয় বেশে দেখতেই হবে। কারোণ এতো সেই নেতা দলে যোগদানেরর পর অনেকবারই হেরেছেন,কিন্তুু লাইনচ্যুত হন নি। পরাজয়কে স্বাগত জানিয়ে দলের জন্য কাজ করেছেন।

সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হওয়া নেতার সমর্থকদের ভক্তি আর শ্রদ্ধা দেখে নিজেকে সংবাদ নিরোপেক্ষ রাখা একটু কঠিনই মনে হচ্ছিলো। কাউনিয়ার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রচারনা চালানোর সময় সামনে থেকে নিজের মোবাইল দিয়ে কয়েকবার দৌড়ে নেতার প্রচারনার ছবি তুলতে চেস্টা করছি। এরকম একাধিকবার ছবি তোলার চেস্টা করে ভালো ছবি পেলাম না। তাই ইঙ্গিত করে নেতাকে পথের মাঝে থামিয়ে ছবি নিলাম। মোবাইল দেখে নেতা তার সাথের একজনকে জানতে চাইলেন আমি কে?

নেতা আমার সম্পর্কে অবগত হলেন। প্রথমে প্রচারকর্মি ভাবলেও পরে জানলেন সংবাদকর্মী । পথে ঘাটে বাসা বাড়িতে যেভাবে পাড়লেন দোয়া চাইলেন। দিনভর যতক্ষণ প্রচারকার্য চালালেন আমিও সাথেই রইলাম। এক পর্যায়ে আমাকে প্রশ্নই করে বসলেন ” কি সাংবাদিক কালকের পত্রিকায় ছবি দেখা যাবেতো!” আমি বললাম অবশ্যই। নেতা আমার পত্রিকার সংবাদ নিরোপেক্ষতা সম্পর্কে ভালো জানেন। ভালো সম্পর্ক পত্রিকার সম্পাদকেরর সাথেও।

সন্ধায় অফিসে এসে সম্পাদককে বলি। সম্পাদক শাহিন ভাইকে মোবাইলের ছবিগুলো নিতে বলেন। পরদিন নেতার ছবি পত্রিকার পাতায় ছাপা হলো। সেই ছবি নেতার কর্মীরা দেখে উজ্জিবীত হল। ছাপাকৃত ছবিটি নেতার নজড়ে এসেছিলো কিনা সে বিষয়ে আমি আজও অবগত নই।

নেতার বরিশালের পত্রিকা অফিসে আগমন। এলেন আমাদের অফিসেও। নেতার আগমনে সম্পাদক তার বসার চেয়ারটি ছেড়ে দিয়ে নেতাকে বসার অনুরোধ করলেন। নেতা রাজি হলেন না। পাশের ছোট্ট চেয়ারটিতে বসে পড়লেন। সম্পাদক জোড় আবদার জানালে নেতা এবার বসলেন। সহকর্মীরা ছবি নিলেন। নেতা সম্পাদক সহ সকল মিডিয়া কর্মীদের দোয়া চাইলেন। চাইলেন নিরোপেক্ষ সংবাদের সহোযোগীতা। সম্পাদকও নেতাকে নিরোপেক্ষতার আশ্বাস দিলেন।

নেতা রাজনৈতিক মাঠে বেশ পুরোনো। প্রধান বিরোধি দলের সহযোদ্ধা প্রার্থী এবার সিটি নির্বাচনে অনুপস্থিত। সঙ্গত কারোণে প্রতিবারের চেয়ে এবার নির্বাচনে সুবিধা জনক অবস্থানে থাকাটা স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তুু হঠাৎ করে সতন্ত্র প্রার্থী হওয়া দানবীর খ্যাত একজন প্রার্থীর আকস্মিক জনপ্রিয়তা নেতার টেনশন। পেছনের দিন গুলোতে পরাজয়ের হাতছানির আভাস। ভাগ্য নির্ধারনি নির্বাচনে নেতার বিজয়। ক্ষমতা দেয়া নেয়ার মালিক যখন সৃস্টিকর্তা, তখন নেতার বিজয় বরিশালকে বদলে দেবে এটা হয়ত নেতার অন্তরের বহুদিনের স্বপ্ন!

বিজয়ী নেতা সরকারের প্রটোকল ছাড়াই মানুষের দরজায়। বরিশাল নাগরীকে আধুনিকায়ন করার মিশনে নেতা। নগরের ছোট্ট সড়ক গুলোকে প্রসস্থ করার উদ্যোগ নিলেন। ভেঙে দিলেন সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা। সড়ক প্রসস্থ হল। পথচারীদের জন্য নান্দনিক ফুটপাত নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যাবস্থা, নাগরীক সুবিধার বাস্তবায়ন, সড়কের রঙ্গিন বাতির আলোয় জানান দিচ্ছে নেতার কর্মগুনের কথা । সৌন্দর্য বর্ধনে বিবির পুকুর পাড় সহ মোড়ে মোড়ে নান্দনিক ফোয়াড়া সহ কতইনা স্থাপনা নির্মাণ। আধুনিক নৌ বন্দরের কথা কে না বলে।

তরুন সমাজকে বিনোদনের জন্য আয়োজন করলেন কির্তনখোলার তীরে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। হাজার দর্শক উপভোগ করে নেতার সফল আয়োজন। শিশুপার্ক কিবা বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নেতা আনলেন জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী আসিফ আকবরসহ দেশের একঝাক শিল্পীকে। উন্মুক্ত কনসার্টের মধ্যে আকাশের বুকে রঙধনুর আতশবাজি কতই না উপভোগ্য ছিলো!

বরিশালকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি কাজ করেছেন দলের জন্য। নেতার খেয়াল কর্মীরা দলের প্রান। ছুটে চলেছেন জেলা শহড়গুলোতে। অংশ নিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলের ক্রিড়া অনুষ্টানে। শুধু কি তাই নেতা সুসম্পর্ক তৈরি করলেন মিডিয়া কর্মিদের সাথেও । খবর পেলেন সাংবাদিক মীর মনিরুজ্জামান অসুস্থ। ছুটে এলেন মীর মনিরুজ্জামান এর টিনের ঘরে। কি এক বড় মনের নেতা! যেখানেই দলের কর্মীরা অশান্তি সৃস্টি করছে কঠরভাবে দমন। নিজ হাতে অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দেবার সুনামও কুড়িয়েছেন নেতা। নগরীকে করলেন সন্ত্রাস মুক্ত। নগর উন্নয়নে যেখানে অনিয়মের খবর পেয়েছেন, বন্ধ করে দিয়েছেন অনিয়মের কাজ। নেতা হবেন নেতার মত যেমন চাইবেরজনগণ!

বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিরোধি দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মহাসমাবেশ। নেতা করলেন পরোক্ষ সহোযোগীতা। কথিত আছে কর্মীদের শান্তিপুর্ণ অবস্থানের বার্তা দিয়েছিলেন নেতা। বরিশাল প্রশাসনের সহোযোগীতা ছিলো নজিরবিহীন। হিংসাক্তক রাজনিতীতে নেতা বিশ্বাসী ছিলেন না প্রমান ওই বিরোধি দলের সফল সমাবেশ। সঙ্গত কারোণে নেতা একটি রাজনৈতিক দলের শির্ষ্য অবস্থানে থাকলেও পাঁচ বছরের কর্মগুনে তৈরি করেছেন অনেক ভক্ত। একজন নেতার তৈরি হল হাজারও নিজস্ব সমর্থক। যারা শুধুই নেতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

নেতার কারিস্মায় গড়ে উঠল সৌন্দর্যময় আধুনিক শহর বরিশাল। নেতার কাজে সারা দেশে প্রশংসার মডেল হলো বরিশাল। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও প্রশংসায় নেতাকে নিয়ে। কর্মবীর নেতা বরিশালবাসীকে স্বপ্নবাস্তবায়নের পথে রেখে হঠাৎ চলে যাবেন তা কি ভেবেছিলো কেউ? সবইতো সৃস্টিকর্তার খেলা।

আজ সেই দিন। নেতার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকি। নেতা চিরোদিনের জন্য ঘুমিয়ে আছেন বরিশাল মুসলিম গোরোস্থানে। মরনের পরেও চিরোস্মরনীয় হয়ে আছেন লক্ষ মানুষের অন্তরে। তিনিই একজন হিরোন। প্রয়াত বরিশালের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র এ্যড.শওকত হোসেন হিরোন। বরিশাল উন্নয়নের মহানায়ক। ভালো থাকুন নেতা,দোয়া রইল আপনার প্রতি।
মহান সৃস্টিকর্তা আপনাকে জান্নাতবাসী করুণ।

লেখক: সোহেল আহমেদ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন