ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান মিতু!

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে দুই বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কলেজছাত্রী জান্নাতুল নাঈম মিতু (১৯) বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিও) লেফট্যানেন্ট কর্নেল কামরুল হাসান এতথ্য জানান।

তিনি জানান, ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন মিতু। নিজে জঙ্গিবাদে জড়িয় পড়ার পর স্বামী জুয়েলকেও একই পথে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জুয়েল তাতে রাজি না হওয়ায় মিতু গত ৩১ মার্চ তার জঙ্গি সাথীদের পরামর্শে দুই বছরের কন্যাসন্তান রোজা আক্তারকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন।

মঙ্গলবার রাতে জেলার বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা কেল্লা এলাকা থেকে দুই সহযোগীসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন মিতু। এদিকে বুধবার ভোরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে একই পরিবারের ছয় নারীসহ সাত জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

র‌্যাব কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, গত ২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম তার জামাতা জুয়েলকে নিয়ে র‌্যাব কার্যালয়ে এসে লিখিত একটি অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ে জান্নাতুল নাঈম ওরফে মিতু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে দুই বছরের শিশুসন্তান রোজা আক্তারকে নিয়ে গত ৩১ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। পরে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেন। নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযানও পরিচালনা করা হয়। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা কেল্লা এলাকা থেকে দুই সহযোগীসহ মিতুকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু তাদের জানিয়েছেন- ২০১৬ সালের জুলাই মাসে একটি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে মেহেদী হাসান ওরফে মাসুদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মেহেদী তাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জেএমবি নেতা জসিম উদ্দিন রাহমানির কিছু উগ্রবাদী বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করেন। এতে তিনি ধীরে ধীরে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, মিতু সোনারগাঁয়ের শিল্পনগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। তার সহযোগী আকবর হোসেন সুমন চট্টগ্রামের হালিশহরে একটি বেকারির সেলসম্যান। অপর সহযোগী মেহেদী চট্টগ্রামেরই একটি খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানির সেলস ম্যানেজার। এই সূত্র ধরেই মেহেদী ও সুমনের মধ্যে পরিচয়। পরে মেহেদীই সুমনকে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করে। এভাবে স্বামীকে তালাক দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে গত ৩১ মার্চ ঘর ছাড়ে মিতু। সংগঠনের কর্মী সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সফরের পরিকল্পনা নেয় তারা। এ লক্ষেই তিনজন নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একত্রিত হয়েছিলেন। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে সোনাকান্দা কেল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) সুমিত চৌধুরী জানান, গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন বিভিন্ন স্থানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বিরোধী লিফলেট বিতরণ করেন দুই নারী। এর সূত্র ধরে বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে ছয় নারীকে শনাক্ত করে।

এর পর বুধবার ভোরে অভিযান চালিয়ে ওই ছয় নারীসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- উপজেলার ছয়ঘাটি গ্রামের হাসান আলী (৪৩), তার স্ত্রী শেফালী খাতুন (৩৫), তাদের কন্যা হানুফা খাতুন (১৯), ফারিহা খাতুন কনা (১৭), হাসান আলীর ভাইয়ের মেয়ে ফারজানা আক্তার সুইটি (১৭), রাজিয়া সুলতানা তৃষা (২২) ও রোজিনা সুলতানা কলি (২৫)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নব্য জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।