ফেরদৌস থেকে জয়নাল

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

‘পেশাদারি জীবন নিয়ে নির্মিত যে কোনো ছবিতে অভিনয়ের বেশ সুযোগ থাকে। তেমনি এক ছবিতে সম্প্রতি কাজ করেছি। এ রকম গল্পের ছবিতে অভিনয় করতে পেরে আমি বেশ উচ্ছ্বসিত। এটা আমার অভিনয় জীবনের সেরা কাজ হতে চলছে।’ ‘সেভ লাইফ’ ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে এভাবে বলেন অভিনেতা ফেরদৌস। ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন ‘জয়নাল’ নামে ফায়ার ব্রিগেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চরিত্রে। তার অধীনেই কাজ করতে দেখা যাবে চম্পা, ওবিদ রেহান ও আইরিনকে। এটি পরিচালনা করছেন আমিরুল ইসলাম শোভা। সম্প্রতি গুলিস্তানের ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স হেড কোয়ার্টার্সে এর শুটিং হয়েছে।

ফেরদৌস থেকে ‘জয়নাল’- জার্নিটি কেমন ছিল? চ্যালেঞ্জিং এই চরিত্রটিতে কাজ করতে গিয়ে প্রথমে একটু চিন্তিত ছিলাম। এটাকে ধারণ করতে পারব কি-না তা নিয়ে ছিল সংশয়। দু’চার দিন শুটিং করার পর ফায়ার ব্রিগেড কর্মীদের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিয়েছিলাম। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেমন করেছি তা দর্শক ভালো বলতে পারবেন। এ ধরনের চরিত্র নিয়ে আমাদের দেশে ছবি হয়েছে হাতেগোনা। একটা কিংবা দুইটা। যে মানুষগুলো নিজের জীবন বিপন্ন করে আমাদের জীবন বাঁচায় তাদের জীবনযাপনের গল্প আমরা কতটা জানি? ‘সেভ লাইফ’-এ কাজ করে ফায়ার ব্রিগেড কর্মীদের জীবনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার অভিনয় ক্যারিয়ারে অভিজ্ঞতাও বটে।

ফেরদৌস

এটি ছাড়াও ফেরদৌস ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’, ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’ ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। শিগগিরই নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘জ্যাম’, ‘গাঙচিল’ ছবির কাজ শুরু করবেন তিনি। জ্যামে বিদেশফেরত যুবক ও গাঙচিল ছবিতে সাংবাদিকের চরিত্রে তাকে দেখা যাবে। গাঙচিল ছবিটি প্রযোজনাও করছেন এই অভিনেতা। এটি নির্মিত হবে নুজহাত ফিল্মস থেকে। এ ছাড়া তার প্রযোজিত পোস্ট মাস্টার-৭১ মুক্তি পাবে আসছে ১৬ ডিসেম্বর অথবা ২৬ মার্চ।

অভিনয় না প্রযোজনা কোনটি বেশি চ্যালেঞ্জিং? প্রযোজনা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। প্রযোজনায় ধারণা কম, তাই কাজটি বেশি ভারি মনে হয়। অভিনয় যেহেতু আমি বিশ বছর ধরে করে আসছি তাই এটা আমার জন্য অনেক সহজ। প্রযোজনা করতে গেলে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। পড়তে হয় অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখেও। আমি প্রযোজক হলে নায়ক হিসেবে ফেরদৌসকেই ছবিতে নিই। তাই চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি থাকে। প্রযোজক হিসেবে চিন্তা করি নায়ক হিসেবে ফেরদৌসকে কীভাবে আরও ভিন্নতা দিয়ে পর্দায় তুলে ধরা যায়। অন্য শিল্পীর বেলায়ও ভাবনা প্রায় একই। কথার সঙ্গে কাজেরও মিল পাওয়া গেল ‘গাঙচিল’ ছবিতে। তার প্রযোজিত ছবির প্রতিটি চরিত্র নিয়ে ভাবেন তিনি।

গাঙচিল ছবিতে নায়িকা পূর্ণিমাকে দেখা যাবে এনজিও কর্মী হিসেবে। এই চরিত্রের প্রস্তুতির জন্য পূর্ণিমার মোটরসাইকেল প্রশিক্ষণ ছিল না। প্রশিক্ষক হিসেবে হাজির হলেন স্বয়ং ফেরদৌস। ছবির শুটিং শুরুর আগে সহশিল্পী পূর্ণিমাকে চরিত্রের উপযোগী করে তোলার কাজে সহযোগিতা করতে পেরে আনন্দিত ফেরদৌস। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দাদের জীবনের নানা ঘটনা ছবির প্রধান উপজীব্য। এই অঞ্চলে এনজিওকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পূর্ণিমা। ফেরদৌস বলেন, চরিত্রের জন্য পূর্ণিমার স্কুটি চালানো শেখাটা খুব জরুরি ছিল। কাজটি ডামি দিয়ে করানো যেত। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আমরা জানি, এনজিও কর্মীরা স্বাবলম্বী হন, তারা স্কুটি চালিয়ে গ্রামগঞ্জে চলেন। সে জন্য এই পরিশ্রম করছি।’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রিয়েলিটি শোর বিচারক হিসেবেও মাঝে মাঝে দেখা মেলে ফেরদৌসের। বর্তমান ‘মাসুদ রানা’ খোঁজার প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তার সঙ্গে অতিথি বিচারক হিসেবে রয়েছেন পূর্ণিমা। প্রতিযোগিতার এখন সেরা দশের যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান ফেরদৌস।

ফেরদৌস

ছটকু আহমেদের পরিচালনায় ‘বুকের ভেতর আগুন’ ছবিতে প্রয়াত সালমান শাহর স্থলাভিষিক্ত হয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ফেরদৌসের। আর নায়ক হিসেবে আলোচনায় আসেন বাসু চ্যাটার্জির ছবি ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ দিয়ে। এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। দেখতে দেখতে ক্যারিয়ারের দুই দশক পার করেছেন ফেরদৌস। এই দীর্ঘ সময়ে পেছন ফিরে তাকালে কী দেখতে পান? তিনি বলেন, মনে হয় এই তো সেদিন এসেছি। কখন যে দুই দশক পার করলাম টেরই পাইনি! এখনও নিজেকে নতুন মনে হয়। এই সময় ক্যারিয়ারে মানুষের ভালোবাসাই বেশি পেয়েছি। এ জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

কাজের জন্য কাজ করলাম, সংখ্যা বাড়ালাম; সেটা আর ভালো লাগে না। অনেক ধরনের ছবিতে কাজ করেছি। এখন বুঝেশুনে কাজ করতে চাই। এমন কাজ করতে চাই, যেটা আগামী প্রজন্মও যেন মনে রাখে। অনেক পেয়েছি। তাতেই আমি খুশি। ক্যারিয়ারে কিছু ভুল হয়তো ছিল। সেগুলো তখন ভুল মনে হয়নি, এখন মনে হচ্ছে। আমার সহশিল্পীরা বেশ সহযোগিতাপরায়ণ। নামিদামি ও নবীন নির্মাতাদের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। প্রত্যেকের কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি। এগুলোই এখন চলার পথে পাথেয়।