পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন

লেখক:
প্রকাশ: ২ মাস আগে

রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

 

বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাকে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় সিয়াম মিয়া। এ সময় জানাজা ও দাফনে মানুষের ঢল নামে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত সোয়া ২টার দিকে আবু সাঈদের লাশ তার গ্রামে এসে পৌঁছে। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে অপেক্ষমান হাজারো মানুষের ঢল নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। পেশায় একজন দিনমজুর। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিল মেধাবী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাঈদ। আবু সাঈদকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। কারণ সাঈদ তার নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত এসেছিল। মেধা ও আচরণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিল সাঈদ। সেই ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা মনোয়ারা বেগম।

এলাকাবাসীরা জানান, আবু সাঈদ স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টফুলে বৃত্তি পান। এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। পরে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার সেলসহ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। ত্রিমুখী এ সংঘর্ষে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এছাড়া আহত অবস্থায় আরও অনেকেই এসেছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে নিহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন বলে জানান তিনি।