স্ত্রী, তিন সন্তানসহ সুখেই দিন কাটছিল পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম (৪২)। সরকার থেকে পেয়েছিলেন পাকাঘরও। তবে সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
ছয় মাস আগে হঠাৎ রফিকুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোমরে ব্যথার কারণে তার চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। কাজও করতে পারছিলেন না। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী শাহানা বেগম। কিন্তু বিধি বাম! গত ১ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে মারা যান শাহানা। এরপর থেকে তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রফিকুল ইসলাম।
স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন রফিকুল ইসলাম ও তার তিন সন্তান। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? কতদিন প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে থাকবেন, সেই চিন্তায় মুষড়ে পড়েছেন অসহায় এ বাবা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ছয় শতাংশ জমিতে স্ত্রী শাহানা বেগমকে (৩৫) নিয়ে বসবাস করতেন রফিকুল ইসলাম।দিনমজুরের কাজ করতেন। অসুস্থ হওয়ার পর এখন কর্মও করতে পারেন না। স্ত্রী পরিবারের হাল ধরলেও তিনিও বেঁচে নেই। এ অবস্থায় তিন সন্তান বিলকিস আক্তার (৭), সুমাইয়া আক্তার (৩) ও মাহমুদউল্লাহকে (১) নিয়ে অকূল পাথারে পড়ছেন রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে শাহানা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথাব্যথায় ছটফট করছিলেন। পরদিন ভোরে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে মারা যান শাহানা বেগম।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মায়ের মৃত্যুর পর থেকে ছোট ছেলে মাহমুদউল্লাহ খুব কান্নাকাটি করছে। দুধের শিশুটি সারাক্ষণ মাকে খোঁজে। ছেলেকে দুধ কিনে খাওয়ানোর টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তরকারি দিয়ে ভাত ও মুড়ি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। আর কতদিন তারা খাবার দেবে? সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে তা ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি। আমার নিজের চিকিৎসা ও সন্তান লালন-পালন নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।
ইন্দুরকানির গাবগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা গাজী আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, রফিকুল ইসলাম দরিদ্র মানুষ। সরকারের দেওয়া বসতঘর ছাড়া তার কোনো সম্পদ নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির সিকদার বলেন, রফিকুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে প্রায় প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার এখন বেহাল দশা। ব্যক্তিগতভাবে সহায়তার পাশাপাশি তাকে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুৎফুন্নেসা খানম বলেন, রফিকুল ইসলামের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। উনি আমাদের কাছে সাহায্য চাইলে সোশ্যাল সেফটি নেওটওয়ার্কের আওতায় তাকে সাহায্য করা হবে।