পিএসসি কর্মকর্তার চিকিৎসায় ৫০ লাখ টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

গুরুতর অসুস্থ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি ৩০তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান।

বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ওই টাকার চেক তুলে দেন অসুস্থ কর্মকর্তার মা বেগম ফাতেমা ও স্ত্রী সারাফ আনিকা হকের হাতে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন। আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি।

নজরুল ইসলামের স্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বুধবার রাতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যাচ্ছি। স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলার শিকার আমার স্বামী।

আনিকা বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে ৩০তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং তেজগাঁও জোনের এসি-ল্যান্ড আব্দুল কাদেরের কাছে জানতে পারি নজরুলের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেবেন। সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী নিজে আমার হাতে চেক তুলে দেন।

এদিকে ৩০তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার রাতেই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানান আনিকা হক।

আনিকার অভিযোগ, রাজধানীর বেসরকারি স্কয়ার হাসপাতালে পিত্তনালীতে পাথর অপসারণ করাতে গিয়ে সেখানকার চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই নজরুল আজ মৃত্যুর মুখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে নজরুল ইসলাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগ দেন। ঢাকার ধানমন্ডি রেভিনিউ সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তাকে পিএসসির সহকারী পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়।

নজরুলের স্বজনরা জানান, গত ১৭ জানুয়ারি পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন নজরুল ইসলাম। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আরফিনের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়। আরফিন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও সার্জারি বিভাগের দায়িত্ব নেন। একপর্যায়ে চিকিৎসক আরফিনের সিদ্ধান্তে নজরুলের পাথর ইআরসিপি করে বের করা হয়। পরে তাকে কেবিনে নেয়া হয়।

কিন্তু কেবিনে আসার পর থেকেই তার অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। রোগীর আত্মীয়-স্বজন বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্বজনদের।

পরে ২১ জানুয়ারি রোগীর স্বজনরা বিষয়টি নিয়ে ডা. আরফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা কনজারভেটিভ ওয়েতে হয়। তাই কিছুটা সময় প্রয়োজন।

রোগীর শরীর খারাপ কেন হচ্ছে- স্বজনরা জানতে চাইলে আরফিন বলেন, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের শরীরের অন্য কোনো জায়গা কেটে যেতে পারে।

এ অবস্থায় ২২ জানুয়ারি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেনের শরণাপন্ন হন রোগীর স্বজনরা। এ সময় রোগী ও তার স্বজনদের কাছ থেকে সবকিছু শুনে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। একপর্যায়ে রোগীর স্বজনদের চাপাচাপিতে এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলীকে অনকলে আনা হয়।

মোহাম্মদ আলী রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের ডিওরেনাম (পাকস্থলীর ঠিক নিচে ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ) কেটে গেছে। পরে স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নজরুলের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। পরে ২৩ জানুয়ারি তাকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়।

এখানে সার্জারি বিভাগের প্রফেসর তৌহিদুল আলমের তত্ত্বাবধানে নজরুলের চিকিৎসা শুরু হয়। বিএসএমএমইউয়ে ভর্তির পর থেকে নজরুলের শারীরিক অবস্থা উন্নতি হতে থাকে। যদিও ডিওরেনাম ক্ষত নিয়ে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েন।

পরে ২৯ জানুয়ারি নজরুলের বিষয়টি নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের চিকিৎসকরা নজরুলকে সর্বোচ্চ ও উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।