পাঁচ কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে ব্রাজিল

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
ব্রাজিল

ব্রাজিলের সর্বশেষ প্রতিপক্ষ অস্ট্রিয়া বিশ্বকাপ খেলছে না ১৯৯৮ সাল থেকে। তার আগের প্রতিপক্ষ ছিল ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপে তারা হয়তো এত বেশি ফেবারিট নয়। তবুও আপনি অস্ট্রিয়া এবং ক্রোয়েশিয়াকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখতে পারেন না। ইউরোপিয়ান দেশ বলে, শক্তির ফারাক খুবই কম।

এমন দুটি দলের বিপক্ষে নিজেদের প্রস্তুতিটা ফরখ করে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। নেইমাররা সত্যিই কতটা প্রস্তুত, তা এই দুটি ম্যাচ দেখেই বোঝা গেছে। তিতের অধীনে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য যে নিজেদের সত্যিকারার্থেই ফেবারিট হিসেবে গড়ে তুলেছে নেইমার বাহিনী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইএসপিএন বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ব্রাজিল কেন বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট। বিশ্বকাপের আগে যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে সেলেসাওরা, তাকে গোল করেছে ৫টি। তবে গোলের চেয়েও যে খেলা তারা দেখিয়েছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে শীর্ষে থেকেই রাশিয়ায় পা রেখেছে তারা। ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে, তাদের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার তিন মাস ইনজুরিতে কাটিয়ে ফেরার পরই ফিরে পেয়েছেন দারুণ ছন্দ।

ইএসপিএনের দৃষ্টিতে যে ৫টি কারণে বিশ্বকাপ জিততে পারে ব্রাজিল, সেগুলো তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য…

১. ‘হালকা’ মিডফিল্ডই সবচেয়ে ভালো
ভিয়েনায় ব্রাজিল শুরু করেছিল দারুণ মিডফিল্ড ফরমেশন নিয়ে। বিশেষ করে তিতে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম এ ধরনের একটি ফরমেশন তৈরি করেন তিনি। যে কম্বিনেশনটা তিনি ধরে রেখেছিলেন ৬০ মিনিট পর্যন্ত। ফিলিপ কৌতিনহো, পওলিনহো এবং ক্যাসেমিরোকে দিয়ে এই ফরমেশনটা সাজান তিতে। এর আগের তার নিজের ২১ ম্যাচে এই জায়গায়টায় তিনি হয়তো রেনাতো অগাস্তো কিংবা ফার্নান্দিনহোকে দিয়ে ফরমেশন সাজাতেন। কিন্তু অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে এখানে পরিবর্তন এনে দারুণ নির্ভরতা পেয়ে গেলেন।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও কৌশল পরিবর্তন করতে দেখা গেছে তিতেকে। লুকা মদ্রিচ অ্যান্ড কোংয়ের কাছ থেকে যে চাপের মুখে পড়েছিলো ব্রাজিল, তাতে তিতের কৌশলই বের করে নিয়ে এসেছে সেলেসাওদের। অস্ট্রিয়াও মিডফিল্ডে একই ধরনের চাপ তৈরি করেছিল শুরুতে। কিন্তু মিডফিল্ডে কৌতিনহোর উপস্থিতি পুরো ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয় এবং পুরো খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ব্রাজিল।

১৭ জুন, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামবে ব্রাজিল। ওই ম্যাচেও একই আক্রমণাত্মক কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নামবে ব্রাজিল। প্রয়োজনে কৌশলও পরিবর্তন করতে দেখা যাবে তিতেকে। ‘ই’ গ্রুপে বাকি দুই দল কোস্টারিকা এবং সার্বিয়ার বিপক্ষেও এই কৌশলে হয়তো খেলতে দেখা যাবে ব্রাজিলকে।

ফার্নান্দিনহো খুবই কার্যকরী একজন মিডফিল্ডার। হয়তো তিতের পরিকল্পনায় প্রথম একাদশে জায়গা পাবেন না তিনি। কিন্তু দারুণ এক অস্ত্র মওজুদ থেকে যাবে ব্রাজিলের সাইডবেঞ্চে। কৌতিনহোই আপাতত মিডফিল্ডকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রয়োজনে ফার্নান্দিনহোকে ব্যবহার করবেন কোচ তিতে।

২. অন্যতম সেরা ডিফেন্স
যারা পরিসংখ্যান পছন্দ করেন, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় তথ্য : ইনজুরি সত্ত্বেও ব্রাজিলকে শুরু থেকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং রক্ষণভাগকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য প্রস্তুত থিয়াগো সিলভা। তার সঙ্গে রয়েছেন মিরান্দা। যে দু’জনকে বলা হচ্ছে ‘হার্ট অব ডিফেন্স’। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই ৩৪ বছরে পা দেবেন দু’জন। ব্রাজিলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী এবং অভিজ্ঞ ডিফেন্স জুটি। ১৯৬৬ সালে গ্রেট বেল্লিনি ছিলেন ৩৬ বছর বয়সী।

সিলভার পিএসজি সতীর্থ মার্কুইনোস কিছুটা মনক্ষুন্ন হতে পারে হয়তো। তিতের অধীনে অধিকাংশ ম্যাচই খেলেছেন তিনি। ২০১৬ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেয়ার পর তিতের মূল পরিকল্পনাই ছিল, ২০১৪ বিশ্বকাপের বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ব্রাজিলকে বের করে আনা। ওই সময়টায় আবার থিয়াগো সিলভা ছিলেন ইজুরিতে। অন্যদিকে মার্কুইনোস ছিলেন উড়ন্ত একজন ডিফেন্ডার। ব্রাজিলকে ১৬ ম্যাচ কোনো গোল হজম করতে দেননি তিনি।

দুই বছর পর, থিয়াগো সিলভা এখন পুরোপুরি অ্যাকশনে। ইনজুরি সমস্যা নেই। বিশ্বকাপের জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ক্লাব সতীর্থ মার্কুইনোসকে পাঠিয়ে দিয়েছেন সাইডলাইনে। জুটি বেধেছেন মিরান্দার সঙ্গে। সবচেয়ে বড় কথা, খুবই শান্ত-শিষ্ট থিয়াগো সিলভার হাতেই উঠবে হয়তো বিশ্বকাপে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড।

৩. দানি, তিনি আবার কে?
এটা তো নিশ্চিত, দানি আলভেজ আর রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে পারছেন না। ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন তিতের দল ঘোষণার আগেই। যদিও তিতে এবং ব্রাজিল সমর্থকরা তার নেতৃত্ব এবং অভিজ্ঞতাকে খুব মিস করবেন। দানি আলভেজের ইনজুরির সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলের রাইটব্যাক নিয়ে একটা মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো সবাই। কিন্তু দানিলো নিজেকে ওই জায়গায় যেভাবে সেট করে নিয়েছেন, তাতে সেই দুঃশ্চিন্তা থাকারই কথা নয়। ক্রোয়েশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে দারুণ সলিড পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন দানিলো।

ভিয়েনায় তো দেখা গেছে, আলভেজকেও ছাড়িয়ে গেছেন দানিলো। বিশেষ করে বল নিয়ে উঠে যাওয়া এবং সময় মত বল বানিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। নেইমার এবং কৌতিনহোকে নিচের দিক থেকে বল যোগান দেয়ার কাজটা দারুণভাবে করে গেছেন তিনি।

যদি তিতে বিশ্বকাপে আরও আক্রমণাত্মক ফরমেশন তৈরি করতে চান, তাহলে ম্যানচেস্টার সিটির এই রাইটব্যাককে আরও অনেক বেশি কাজে লাগাতে পারবেন তিনি। বিশেষ করে সামনে জায়গা তৈরি করে আক্রমণ শানানোর কাজে ব্রাজিলকে অনেক বেশি সহায়তা করতে পারবেন তিনি। যা তিতের কাজকে আরও অনেক বেশি সহজ করে দেবে।

৪. প্রথম একাদশে জায়গা নিশ্চিত হেসুসের
লিভারপুলের হয়ে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়েছেন রবার্তো ফিরমিনো। যে কারণে, কোচ তিতের আগ্রহের তালিকায়ও রয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিতের সেরা একাদশে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফিরমিনোর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী যে গ্যাব্রিয়েল হেসুস! ফিরমিনোকে হেসুসের জায়গাটাই দখল করতে হবে। কিন্তু সেটা কি সম্ভব?

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যখন হেসুসকে দেখা গেছে সংগ্রাম করতে এবং তার পরিবর্তে মাঠে নেমে ফিরমিনো যখন নিজের সেরা পারফরম্যান্স দেখালেন, একটি গোলও করলেন তখন ফিরমিনোকেই সবাই সেরা একাদশে ভেবে রেখেছিল। কিন্তু ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে হেসুসকে দেখা গেলো ভিন্ন এক রূপে। পুরোপুরি পরিবর্তিত এক ফুটবলার। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে গোল করে ব্রাজিলের হয়ে নিজের স্কোরকে নিয়ে গেলেন ১০-এ (১৭ ম্যাচে)। তিতের অধীনে এতটা নিয়মিত নেইমারকেও দেখা যাচ্ছে না, যতটা রয়েছেন হেসুস। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে রোস্তভ এরেনায় তিতের শুরুর একাদশে যে হেসুসই নিশ্চিত, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

৫. ভদ্র মহিলা এবং ভদ্র মহোদয়গণ, তিনি ফিরে এসেছেন
বছরের শুরুতে হঠাৎ করে ইনজুরি। ২০১৪ বিশ্বকাপটাকেই যেন ফিরিয়ে এনেছিল ব্রাজিলিয়ানদের জন্য। পিএসজির হয়ে মার্শেইয়ের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো নেইমারকে। এরপর অস্ত্রোপচার। তিন মাসেরও বেশি সময় মাঠের বাইরে। রিহ্যাব করেছেন নিবিড়ভাবে। অনুশীলন করেছেন। অবশেষে নেইমার ফিরে এলেন মাঠে।

যদিও, নেইমারের ফিরে আসার বিষয় নিয়ে এখনও সমর্থক কিংবা তার সতীর্থরা খুব বেশি উৎসাহী নন। কারণ, এখনও ম্যাচ ফিটনেস ফিরে পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন নেইমার। তবুও, ব্রাজিলের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছেন দ্বিতীয়ার্ধে এবং অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে খেলেছেন ৮৩ মিনিট। তাতেই দুটি গোল করে ফেলেছেন তিনি। ৮৫ ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে করে ফেললেন ৫৫ গোল। পৌঁছে গেলেন রোমারিওর উচ্চতায়। রয়েছেন তৃতীয় স্থানে।

মাত্র ২৬ বছর বয়স। এখনই কল্পনা করা যায়, রোনালদোর ৬২ কিংবা পেলের ৭৭ গোলকে পার হয়ে যেতে পারবেন নেইমার। তবে, এটা ঠিক এখন আপাতত গোলের রেকর্ডের চিন্তাই নেই। নেইমারের চিন্তায়, নিজের দেশকে ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দেয়া এবং সে লক্ষ্যেই নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলেছেন তিনি।