চট্টগ্রামে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে মেজবানের আয়োজন করা হয় ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে। প্রায় দেড় লাখ মানুষের জন্য এ আয়োজন করা হলেও ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে ঘটে গেছে ১০ প্রাণহানির মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জামালখানের রিমা কমিউনিটি সেন্টারে সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ১০ হাজার মানুষের জন্য পৃথক মেজবানের আয়োজন করা হলেও সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র ১০ পুলিশ সদস্য! তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মাত্র চারজন পুলিশ ছিল কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে। পুলিশ দাবি করেছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে নিরাপত্তায় ১০ পুলিশ সদস্য এবং বাইরে মোবাইল ডিউটিতে ছিলেন ১০ পুলিশ সদস্য। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল। হঠাৎ করে মানুষের চাপ বেড়ে যাওয়ার পর গেটে হুড়োহুড়ি করে ঢুকতে গিয়েই ১০ জন মারা গেছেন। এতে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না।’
প্রত্যক্ষদর্শী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বিমল দেব বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে তখন কয়েক হাজার মানুষ। কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর মাত্র চার পুলিশকে বসে থাকতে দেখেছি। গেট নিয়ন্ত্রণ করছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্বেচ্ছাসেবকরা। পুলিশ নিরাপত্তায় কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। পুলিশ তৎপর থাকলে ১০ জনকে মরতে হতো না।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জামালখানের বাসিন্দা নির্ঝর বর্মণ বলেন, ‘ঘটনার আগে গেটে কোনো পুলিশ দেখিনি। ১০ জন মানুষ মারা যাওয়ার পর কয়েকশ’ পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনার আগে পুলিশের সংখ্যা বেশি থাকলে এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’
তবে সিএমপির ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কমিউনিটি সেন্টারে এত মানুষ জড়ো হবে, সে তথ্য ছিল না। পুলিশ সচরাচর যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, সে ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। একসঙ্গে পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকতে যাওয়ার কারণেই একজনের ওপর আরেকজন পড়ে পদদলিত হয়েই মারা যায় ১০ ব্যক্তি। গেটে শক্ত নিরাপত্তা থাকলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত বলে স্বীকার করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি উপলক্ষে চট্টগ্রামের ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করে তার পরিবার। তবে সবগুলো কমিউনিটি সেন্টারেই ছিল বিশৃঙ্খলা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল নগরীর পাঁচলাইশ থানা সংলগ্ন কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে। এখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়। নিরাপত্তার জন্য শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। জিইসি মোড় সংলগ্ন কে স্কয়ার কমিউনিটি সেন্টারে ছিলেন ১০ সদস্য, চকবাজারের কিশালয় কমিউনিটি সেন্টারে ছিল আট থেকে ১০ জন, পাঁচলাইশের সুইস পার্কে ছিল আট থেকে ১০ জন, লাভলেইন মোড়ের স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে ছিল আট থেকে ১০ জন, শুলকবহরের এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারে ছিল ৬০ জন, এক কিলোমিটার এলাকায় কেবি কনভেনশন সেন্টারে ছিল ২০ জন, কাজীর দেউড়ি মোড়ের ভিআইপি ব্যানকুইটে আট থেকে ১০ জন, আগ্রাবাদের গোল্ডেন টার্চে আট থেকে ১০ জন, উত্তর পাহাড়তলীর সাগরিকা কমিউনিটি সেন্টারে আট থেকে ১০ জন, দক্ষিণ হালিশহরের মুনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে আট থেকে ১০ পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান সমকালকে বলেন, ‘দি কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে নিরাপত্তায় শতাধিক পুলিশ সদস্য, এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারে ৬০ পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। আমার এলাকায় যে কয়েকটি মেজবান হয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি এখানে।’