নদীতে নিষেধাজ্ঞা, ডাঙায় কিস্তির চাপ সহায়তার অপেক্ষায় জেলেরা

:
: ২ years ago

ইলিশের অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ৯ দিনে পড়ল। পেটের ক্ষুধায় এরপরও জেলেদের একটি অংশ নানা কৌশলে নদীতে নামছে। জেল-জরিমানার আতঙ্কে অন্যরা কাটাচ্ছেন অলস সময়। তার ওপর কিস্তির চাপে দিশেহারা জেলেরা। এদিকে নদীতীরের জেলেপাড়ায় এখনো পৌঁছায়নি সরকারি খাদ্যসহায়তা। কবে নাগাদ চাল পাবেন, তা-ও জানেন না তাঁরা।

 

জেলেদের ভাষ্যমতে, ঘরে চাল না থাকলে মাছ ধরতে নদীতে নামতেই হবে অধিকাংশ জেলেকে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জাটকা শিকার বন্ধে জেলার ৩ উপজেলা যথাক্রমে হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও সদরের একাংশের ৮২ কিলোমিটারজুড়ে ১ মার্চ থেকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। ওই তিন উপজেলার ৪০ হাজারের বেশি কার্ডধারী জেলে নদীতে নিষেধাজ্ঞা আর ডাঙায় কিস্তির চাপ সহ্য করে খাদ্যসহায়তার আশায় দিন গুনছেন।

 

বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সালাম হাওলাদার দুই যুগ ধরে কালাবদর, কীর্তনখোলায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, ‘৪ মাসে ১৬০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা।

 

কিন্তু আমরা নদীতে না নামলেও সরকারি চালের দেখা মেলেনি এখনো।’ তিনি বলেন, অবরোধের সময় চাল না পেলে তাতে লাভ কী! অথচ এনজিওর কর্মীরা কিস্তির জন্য হাজির হন। এমন চাপে জেলেরা বাধ্য হয় নদীতে নামছেন।

 

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ভাতের অভাবে জেল-জরিমানাকে থোড়াই কেয়ার করেন জেলেরা। অনেকে বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন। তিনি জানান, তাঁর ইউনিয়নের কার্ডধারী ৮৬০ জেলে খাদ্যসহায়তা পাবেন। অবশ্য এখন পর্যন্ত সহায়তার খবর নেই।

 

জানতে চাইলে বরিশাল সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত জানান, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তাঁরা। তার দাবি কীর্তনখোলা, কালাবদরে জাটকা ধরে না।

 

তাই গত ৭ দিনে সদরে মাত্র ৩ জন জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অবশ্য খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীসহ সায়েস্তাবাদ, তালতলি, চন্দ্রমোহনে হাটবাজারে জাটকা বিক্রি চলছে অহরহ।

 

মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব বলেন, সদরে কার্ডধারী প্রায় ৬ হাজার জেলের মধ্যে খাদ্যসহায়তা পাবেন ৩ হাজার ২০০ জন। নিষেধাজ্ঞার ৯ দিনেও কেন জেলেদের কাছে খাদ্যসহায়তা পৌঁছায়নি এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের চাল বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য সদরে কোনো চেয়ারম্যান এখনো চাল বণ্টন শুরু করেননি বলে স্বীকার করেছেন মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব।

 

মেঘনাঘেরা মেহেন্দীগঞ্জে জাটকা নিধন ঠেকাতে চলছে যৌথ অভিযান। তবু থামানো যাচ্ছে না জাটকা শিকার। গতকাল সোমবার ১৮ জেলেকে জেল-জরিমানা এবং ২ লাখ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করেছে প্রশাসন। তবে এখানকার একাধিক জেলের ভাষ্যমতে, ৯ দিনেও খাদ্যসহায়তা না পেয়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন।

 

জানতে চাইলে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে কার্ডধারী ২২ হাজার ২৯৪ জেলের মধ্যে চার মাসে ১৬০ কেজি করে চাল পাবেন ২০ হাজার ২২৪ জন।

 

তিনি বলেন, চাল ইউপি চেয়ারম্যানেরা বিতরণ করবেন। তাঁরা বরাদ্দ দিয়ে দিচ্ছেন। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মেহেন্দীগঞ্জে চাল নিয়ে জাহাজ যে খাল দিয়ে ঢুকবে, তাতে খননকাজ চলছে। খালের মুখ বন্ধ থাকায় আগামী সপ্তাহে চাল পৌঁছাতে পারে।

 

জেলেদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলেদের দাবি অনেক। তালিকায় কার্ডধারী যারা আছে তার ২০ থেকে ৩০ ভাগ নাবালক। জেলে তালিকায় অনিয়ম ঢুকে পড়ায় নতুন করে যাচাই-বাছাই চলছে।

 

মেঘনা তীরের হিজলা উপজেলায়ও নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে জাটকা নিধন চলছে দেদার। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির হিজলা উপজেলা সভাপতি জাকির সিকদার বলেন, মূল মেঘনায় অভিযান না চলায় অভয়াশ্রমে নামমাত্র নিষেধাজ্ঞা চলছে। এখানকার হাটবাজারে জাটকা বিক্রি হয় দেদার।

 

হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ বলেন, ‘উপজেলার কার্ডধারী জেলেদের মধ্যে খাদ্যসহায়তা পাবেন ১৫ হাজার ১৮৮ জন। তাঁরা চাল দেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন।

এখানকার ৬টি ইউপিতে আগামী সপ্তাহে হয়তো জেলেরা চাল পাবেন। চাল পেতে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা চেয়ারম্যানদের গাফিলতি।’ তার মতে, যে উদ্দেশ্যে সরকার খাদ্যসহায়তা দেয়, তা বাস্তবায়নে সময় মতো জেলেদের হাতে চাল না পৌঁছালে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি ব্যাহত হতে পারে।