জেলার রানীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসন। গত ২৭ জুলাই এ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। ইতোমধ্যে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে বিএনপি কেন্দ্র থেকে সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
জানা গেছে, ১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান। ২০০১ ও ২০০৬ সালে পুনরায় আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মরহুম ইসরাফিল আলম। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। একই বছরে এলডিপি থেকে পদত্যাগ করেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের ছোট ভাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ফের বিজয়ী হন ইসরাফিল আলম। মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।
এক সময় এ দুই উপজেলা জঙ্গি এলাকা হিসেবে পরিচিত থাকলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকটায় নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় কোনোধরনের প্রাণহানি চান না এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতনরা।
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল ও নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া মরহুম ইসরাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভিন বিউটির নামও শোনা যাচ্ছে।
রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘আমি শতভাগ আশাবাদী মনোনয়ন পাব এবং বিজয়ী হব। রানীনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মূল বলতেই আমরা’। অপর এক প্রশ্নে বলেন, নির্বাচনের মধ্যে কোনোধরনের অপ্রীতিকর বা সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি মনে করেন।
নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, ‘যদি তৃণমূলের অবস্থান বিবেচনা করে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে আমি আশাবাদী। এ দুই উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পরিকল্পনা আছে’।
তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে দুই উপজেলার ১২শ জনকে খাদ্য সহায়তা, মাস্ক প্রায় ১৪ হাজার এবং সচেতনতামূলক ১০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরে প্রায় ৩ লাখ টাকার শাড়ি-লুঙ্গি দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ১০-১২ বছর ধরে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে কাজ করছি’।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় এ আসনের দুই উপজেলায় ব্যাপক জনসমাগম করেছিলাম। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে গিয়েছি। যার প্রতিফল এখন হচ্ছে। জনগন আমাকে ভালোবাসে তার বহিঃপ্রকাশ এখন বুঝতে পারছি। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন’।
নওগাঁ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। কেন্দ্র যদি মনে করে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে হবে তাহলে আমরা অংশ নেব। এরপর প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হবে। আর যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে তো প্রার্থী যাচাইয়ের কোনো প্রশ্নই আসে না’।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইসরাফিল আলম। ১৯৬৬ সালে রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সংসদে তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওই কমিটির পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।