দুর্নীতিতে বিশ্বে ১৩তম বাংলাদেশ

:
: ২ years ago

বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থার প্রকাশ করা ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২১’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে।

সিপিআই ২০২১ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ গত বছরের সমান ২৬ স্কোর পেয়ে ১৩তম অবস্থানে আছে। গত (২০২০ সাল) বছর নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ছিল ১২তম।

দেশ ও অঞ্চলের ২০২১ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) ১৪৭ নম্বরে।

 

২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে টিআই প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। সবশেষ গত চার বছরে অবস্থান পরিবর্তন হলেও দুর্নীতির চিত্র ২৬ স্কোর নিয়ে একই অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশে।

এদিকে টিআইবি’র সূচকে ৮৮ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে যৌথভাবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।

৮৫ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও নরওয়ে এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সুইজারল্যান্ড। এরপর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে নেদারল্যান্ড (স্কোর ৮২), পঞ্চম লুক্সেমবার্গ (৮১), ষষ্ঠ জার্মানি (স্কোর ৮০), সপ্তম যুক্তরাজ্য (স্কোর ৭৮) ও অষ্টম স্থানে রয়েছে হংকং (৭৬)।

 

৭৪ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে নবম স্থানে আছে কানাডা, আয়ারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও অস্ট্রিয়া। যৌথভাবে দশম স্থানে আছে ৭৩ স্কোর নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জাপান ও উরুগুয়ে।

আর ২০২১ সালের তালিকায় ১১ স্কোর পেয়ে সর্বনিম্নে অবস্থান করছে দক্ষিণ সুদান। ১৩ স্কোর পেয়ে তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া ও সোমালিয়া এবং ১৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন ভেনিজুয়েলা।

এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় কম দুর্নীতিগ্রস্তের দিক দিয়ে ৬৮ স্কোর নিয়ে ২৫তম অবস্থানে থেকে সবার ওপরে ভুটান, ৮৫তম ভারত (স্কোর: ৪০), ১০২তম শ্রীলংকা। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নিচে ১৭৪তম অবস্থানে আফগানিস্তান।

প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশের এই অবস্থানকে খুবই হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আটটি জরিপের ফলাফল থেকে সূচকটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে বাংলাদের দুর্নীতির চিত্র অনুযায়ী স্কোর পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ দুর্নীতি আগের মতোই আছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্কোরটা হচ্ছে মূল বিষয়। অন্য কোনো দেশ খারাপ করার কারণে আমাদের অবস্থান আগের চেয়ে একধাপ এগিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্কোর আগের মতোই ২৬ রয়ে গেছে। তাই আমাদের দুর্নীতি আসলে কমেনি। এটা হতাশাজনক। ১০ বছর ধরে আমরা ২৫, ২৬, ২৭ এরকম প্রায় একই অবস্থানে আছি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরা আফগানিস্তানের পরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে। কাজেই এই স্কোর আমাদের জন্য বিব্রতকর।

তিনি বলেন, দুর্নীতির দুষ্ট চক্রের গ্রাস থেকে বের হতে পারিনি। কোভিডের সময় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান, বিচারহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির কারণে দুর্নীতির উন্নয়নে ঘাটতি রয়েছে।

প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করেও দুর্নীতি না কমার পেছনের মূল কারণ কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের জিরো টলারেন্স থাকার পরও না কমার মূল কারণ এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের হাতে তারাই দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতি কমানোর যে প্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলো ভালো নয়। এর পাশাপাশি আরেকটি কারণ হলো- প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আমরা দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে মনে করি। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।