‘তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার মানুষের প্রয়োজনও এটা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছর বাংলাদেশ সরকার চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ আছে।’
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে চীনের ভাবমূর্তি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ।
লি জিমিং বলেন, ‘সহকর্মীদের নিয়ে আমি রংপুর বিভাগ পরিদর্শন করেছি। সেখানে শুধু তিস্তা প্রকল্প নয়, ওই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি কীভাবে হতে পারে, তা আমরা দেখেছি। সেখানে উন্নয়ন প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করতে চায়। এছাড়া, আমরা সিলেট গিয়েছিলাম। সেখানেও দেখেছি।’
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই। বাংলাদেশের সরকার গত বছর আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। ঢাকার চীন দূতাবাস প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে চীন সরকার গভীরভাবে মূল্যায়ন করছে।’
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষ নিয়ে ভয় পাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘আমি খোলামেলাভাবে বলতে চাই যে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের কিছুটা অনীহাও আছে। কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নের পেছনে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আছে, যা এরইমধ্যে আমরা টের পেয়েছি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং উদ্বেগ হচ্ছে, যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে বাইরের কেউ এসে বলে বসে, এটি চীনের আরেকটি ঋণের ফাঁদ হবে অথবা এখানে যদি সুনির্দিষ্ট ভূ-রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে এসে বলে বসে যে, দুঃখিত চীন, আমরা আর সামনে এগিয়ে যেতে পারছি না। শেষে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বিষয়টি আমাকে বেকায়দায় ফেলবে এবং আমি বিব্রত হবো।’
তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় আমি নিশ্চিত করতে চাই যে, তিস্তা অঞ্চলের স্থানীয় জনগণ প্রকল্পটি চায়। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে স্থানীয় জনগণের অভিমত দেখে আমি খুবই আশাবাদী, যা বেইজিংকে জানাব। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন স্পর্শকাতর। কিন্তু, এটি খুবই ইতিবাচক একটি প্রকল্প, যা ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন নীরবে কাজ করছে বলে দাবি করেছেন লি জিমিং। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন মধ্যস্থতা করছে। ইতোমধ্যে ত্রিপক্ষীয় তিনটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের অগ্রগতি পুরোপুরি প্রকাশ করা এখনই ঠিক হবে না। গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিয়ানমার ইস্যুতে আমাকে জানিয়েছেন। পরে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই ইস্যুতে উন্নতি ঘটছে এবং ইতিবাচক বার্তা আছে। কিন্তু, সমাধানের স্বার্থে সবকিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে চীন শক্ত ভূমিকা রাখলে আমরা অবশ্যই খুশি হবো। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই তাদের আরও তাগিদ দেব। তবে, কোনো একটি দেশ একটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলে, এতে দুই দেশের বন্ধুত্বে কোনো প্রভাব ফেলে না।’
সচিব শাব্বির আহমেদ বলেন, ‘চীনা ঋণের ফাঁদ নিয়ে সমালোচনা আছে৷ তবে, এই ঋণ নেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে আমাদের সক্ষমতা বা পছন্দের ওপর। চীনা শিক্ষার মান নিয়েও নানা কথা আছে। কেননা, চাকরির ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে পশ্চিমা দেশের ডিগ্রিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।’