গরম মৌসুমের লোভনীয় ফল তরমুজ উঠতে শুরু করছে রাজধানীর বাজারে। তবে আগাম বাজারে আসায় দাম একটু বেশি। কিছুদিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। এবারও খুচরা পর্যায়ে তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শুক্রবার (৩ মার্চ) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ফলপট্টিতে দু-তিনটি দোকানে তরমজু উঠেছে। বিক্রেতারা জানান, ফাল্গুনের শুরু থেকে তরমুজ আসছে। এখন মাত্র ৭-৮টি তরমুজের গাড়ি আড়তে আসছে। মূলত দক্ষিণাঞ্চল থেকে এসব তরমুজ আসছে। বিক্রেতারা এগুলোকে বলছেন ‘বাংলালিংক’ ও ‘কালো তরমুজ’।
আড়তে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন জোগান ও চাহিদা কম থাকায় কেউ চাইলে ওজন মেপেও আড়ত থেকে তরমুজ নিতে পারছেন।
এখানে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের ১০০ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার ২০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটি তরমুজের দাম পড়ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বড় ও ভালো পাকা তরমুজ এখনো বাজারে আসা শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।
যাত্রাবাড়ী আড়তের মল্লিক এন্টারপ্রাইজের দোকান ভর্তি তরমুজ। বিক্রি করছিলেন মো. মনির হোসেন। দোকানে ভিড় নেই। মনির হোসেন বলেন, ফাল্গুনের ১ তারিখেই আড়তে তরমুজ আসছে। শ’ হিসাবে আমরা বিক্রি করি। এখন ১০০ তরমুজ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি তরমুজের ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি। আরও ছোট হলে সেটার দাম আরও কম, ১০ থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে হবে।
তিনি বলেন, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী থেকে আসছে এসব তরমুজ। এখন প্রতিদিন ৭-৮ ট্রাক তরমুজ আসে। যখন পুরো সিজন শুরু হবে তখন প্রতিদিন ১০০টির মতো ট্রাক আসবে শুধু তরমুজ নিয়ে।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। এখন আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, ঝড়-বৃষ্টি তেমন না হয়, তবে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। মানুষও কম দামে তরমুজ খেতে পারবেন।
কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ থেকে তরমুজ কিনতে এসেছেন খুচরা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বেছে বেছে কিছু তরমুজ নেন। ওজন করার পর দেখা যায় ৭১ কেজি হয়েছে। দাম দিলেন প্রতি কেজি ৩০ টাকা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি কেজি তরমুজ ৩০ টাকা, আড়তে আরও কিছু খরচা আছে। গাড়িভাড়া, লেবার ও সব খরচা মিলাইয়া দোকানে যাইতে যাইতে কেজি ৪০ টাকা পইড়া যাইবো। আর আমি ৫০ টাকা কেজি দরে বেচমু।’
একজন আড়তদার জানান, আড়তে সাধারণত কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হয় না। কিন্তু এখন ভিড় নেই। তরমুজের সরবরাহ কম, চাহিদাও কম। তাই কেউ চাইলে কেজি দরেও নিতে পারে। তবে পরে আর এ সুযোগ থাকে না।
ডেমরার বামৈলের খুচরা ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, ‘এখন ঠিকা তরমুজ নিয়া লাভ নাই। বেশিরভাগই কাঁচা পড়ে। তাই নিয়া কয়েক দিন রাখতে হয়। আমি আসছি তরমুজ কিনতে, নেওয়া যায় কি না যাচাই-বাছাই করতেছি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিন-চারটি তরমুজের দোকান বসেছে। সেখানে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।
রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডের তরমুজ বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতি কেজি তরমুজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করি। কেউ চাইলে ঠিকাও তরমুজ নিতে পারবে। নতুন আসছে, তাই দাম একটু বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।’
আগে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওজন মেপে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওজন মেপে তরমুজ কিনে ক্রেতা ঠকছেন। ওজন মেপে তরমুজ বিক্রি সরকার নিষিদ্ধ করেনি। কিন্তু গত বছর বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রশাসন ওজন করে তরমুজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।