#

নানা প্রযুক্তির সমারোহে ডিজিটালে রূপ নিচ্ছে বরিশাল নগর ভবন। বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নতি হওয়ার পর এই প্রথম বারের মত নাগরিক সেবায় নগর ভবন ডিজিটালে রূপ নিচ্ছে। এর অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে সার্ভারসহ প্রয়োজনীয় আধুনিক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বরিশালে এসে পৌচেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এসব যন্ত্রাংশ মঙ্গলবার রাতে গ্রহণ করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এর মাধ্যমে বিসিসির রাজস্ব খাত ও হিসাব বিভাগকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আসবে।

অথ্যাৎ রাজস্ব খাত ও হিসাব বিভাগ একটি সুনিদৃষ্ট কর্মপন্থায় এসে কর্পোরেশনের কাজের গতি বাড়বে। এরমাধ্যমে সময়ের অপচয় কমার পাশাপাশি কাজের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈজন্য সাক্ষাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের অব্যবস্থাপনা তুলে ধরেন। একই সাথে বরিশাল শহর ঘিরে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানান মেয়র।

এসব পরিকল্পনা শুনে খুশি হয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। জানাগেছে, খুব শীঘ্রই প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ নগর ভবনে স্থাপন করা হচ্ছে। এর মাধ্যেমে ঘড়ে বসেই বিভিন্ন বিল পরিশোধসহ নানা সেবা পাবেন নাগরিকরা। এছাড়া কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য চালু করা হচ্ছে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে ঘরে বসে কাজ না করে বেতন নেওয়ার দিনের অবসান হচ্ছে। নগরীর নানা উন্নয়ন মূলক কাজ গ্রহণ, অগ্রগতি, ব্যয়সহ সব তথ্যই নগরবাসীর জন্য উনমুক্ত থাকবে। নগর ভবনে কোন নাগরিকের অভিযোগ গ্রহণের পর তাৎক্ষনিক তার সমাধান মিলবে। সচল হচ্ছে কর্পোরেশনের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ। এখনে কর্পোরেশনের দৈনন্দিন কর্মকান্ড ও কর্মপরিল্পনা আপডেটের পাশাপাশি নানা সমস্যা, উন্নয়ন কাজের নানা মতামত তুলে ধরে অংশগ্রহণ করতে পারবেন নাগরিকরা। প্রয়োজনে মেয়রের সাথে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগও থাকছে।

এছাড়া কর্পোরেশনের অধিকাংশ কাজের আপডেট তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন সফটওয়ার। বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, বিগত মেয়রদের সময় বকেয়া বেতন-ভাতার দাবির আন্দোলনে মাসের পর মাস অচল হয়ে পড়েছিল নগর ভবন। কিন্তু বর্তমান মেয়রের স্বচ্ছ ও জবাবদিহীতার কারণেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই অবস্থা কেটে গেছে।

বিসিসি সূত্রে জানাগেছে, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর গত তিন মাসেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে বরিশাল শহর। একটি আধুনিক শহর ও নগর ভবন গড়তে ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। গত তিন মাসে নতুন করে সরকারি কোন বরাদ্ধ না পেলেও কর্পোরেশনের অবশিষ্ট অর্থে বাস্তবায়নকৃত নানা উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সংস্কার করা হয়েছে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও ড্রেন। নগরীর পরিচ্ছন্ন রাখতে ঢেলে সাজিয়েছেন কর্মপদ্ধতি। ঘোষণা করেছেন পরিচ্ছন্নতা অভিযান।

নগরীতে অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি না সাটাতে রয়েছে কঠোর নির্দেশনা। রাস্তার লাইটপোস্টে জ্বলছে আলো। কপোরেশনের কর্মীদের তদারিকর জন্য গভির রাতেও সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন মেয়র। যা ইতিমধ্যে সকলের প্রশাংসা কুড়িছে। দুনির্তীর বিরুদ্ধে মেয়রের যুদ্ধ: দায়িত্ব গ্রহণের পরেই দুনির্তীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দুনির্তীবাজ কর্মকর্তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি করার পাশাপাশি নগর ভবনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে নানা অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন উদ্ধর্তন কর্মকর্তাকে তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে। আগে যেকোন কাজের জন্য নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচ গ্রহন ছিল রিতিমত নিয়ম। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আর ফাইল আটকে রেখে গ্রাহকদের হয়রানি করার ব্যাপারে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীই সাহস দেখান না।

সেবা নিয়েছেন এমন একাধিক নাগরীক বলেন, নগর ভবনে গিয়ে এখন বিনা উৎকোচে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যায়। অবস্থা এমন হয়েছে এখন বিসিসির কোন স্টাফকে খুশী হয়ে টাকা-পয়সা দিতে চাইলেও তারা তা গ্রহনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এসব স্টাফদের অনেকেই আগে অফিস খরচার নামে শহরের নাগরিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, এখন সকলের মাঝে একটা শৃঙ্খলাভাব দেখা যাচ্ছে।

আগে যারা নিয়মিত অফিসে না এসে এক সপ্তাহের হাজিরা খাতায় একদিনে স্বাক্ষর করতেন এখন তারাই সকাল নয়টার মধ্যে অফিসে প্রবেশ করেন এবং মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নেন। সবমিলিয়ে নগর ভবন ফিরে পাচ্ছে তার নিজস্ব ছন্দ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন