চরফ্যাশনে গণস্বাস্থ্যের গাফিলতিতে হাত হারানো হোসেন পড়াশোনায় থেমে নেই!

:
: ২ years ago

বৈদ্যুতিক তারের সাথে জড়িয়ে হাত হারানো ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র হোসেনের লেখাপড়া থেমে থাকেনি। ২য় শ্রেণি থেকে ডান পা দিয়ে লিখে শিক্ষা জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

বড় হয়ে সে চাকরি করতে চায় । এছাড়া কৃত্রিম ২টি হাত হলে সে তার নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ নিজেই করতে পারবে এমন আশা ব্যক্ত করেছেন তার পিতা-মাতা। জানা যায়, গত ২০১৫ সালের (১০ আগষ্ট) সোমবার সকাল ৯ টায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরকচ্ছপিয়া গণস্বাস্থ্য পাঠশাল্ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো মো. হোসেন (১৩)।

 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দোতলা নির্মাণাধীন ভবনে উঠে খেলাধূলা করার একপর্যায়ে নির্মাণাধীন ভবনের পার্শ্বস্থ অরক্ষিত বৈদ্যুতিক খুটির ১১ হাজার ভোল্টে’র তারের সাথে জড়িয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় চিকিৎসায় জন্য নেওয়া হলে তার জীবন রক্ষার্থে হাত হারাতে হয়।

 

সে বর্তমানে উত্তর চরমানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। হাত না থাকলেও থেমে নেই তার পড়াশোনার জীবন। তার জীবনের লক্ষ্য একটি চাকরি করা। হোসেন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড চার্চ কলোনীতে বসবাসরত দরিদ্র কৃষক শাহাবউদ্দিন ও রহিমা বেগমের ছেলে।

 

পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে পঞ্চম নম্বর সে। হোসেনের মা রহিমা বেগম বলেন, প্রাইমারি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করলে তাকে যখন হাই-স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলাম। তখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হোসেন কে ভর্তি করতে চাননি। যার হাত নেই সে লিখবে কিভাবে এই পড়বে এবং লিখবে করে প্রধান।

 

হোসেন পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে অনুরোধ করলে পরে স্কুলে ভর্তি করেন। আমার ছেলে হোসেন খুব মেধাবী এবং বর্তমানে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। তিনি আরও জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নির্মাণধীন দোতলা ভবনের অরক্ষিত বৈদ্যুতিক তাঁর জড়িয়ে হাত হারালোও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষের কোনো খোঁজ খবর নেননি এবং অদ্যবধি পর্যন্ত কোনো অনুদান দেননি।

 

হোসেনের দুর্ঘটনার পর ভবনের ছাদে উঠার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। হোসেন জানায়, বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমি পড়াশোনা করতে পারছি। হোসেনের বাবা শাহাবুউদ্দিন জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পড়াশোনা করার সময় ছাদের উপর দিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তাঁর জড়িয়ে হোসেন বিদ্যুৎ স্পষ্ট হয়, ঢাকায়
নেওয়া হলে জীবন বাচাঁনের জন্য হাত কেটে ফেলের সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসকরা। হোসেনের এই দূর্ঘটনায় আমার প্রায় ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।

 

বর্তমানে আমি শূন্য, ওরা পাঁচ ভাই বোন অভাবের সংসারে ওদের পড়াশোনা করানোর খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে যদি কৃত্রিম হাত লাগানো যেত তাহলে প্রতিভাবান হোসেন ফিরে পেত আগের মতো স্বাভাবিক জীবন।

 

অন্যদিকে সরকারের কাছে সহায়তার জন্য এমনটাই আশা করছেন হোসেনের দরিদ্র পরিবার। উত্তর চর মানিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, হোসেন মেধাবী ও প্রতিভাবান। পা দিয়ে লিখলেও অনেকের চেয়ে হাতের লেখা সুন্দর। আমাদের বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকরা হোসেনের প্রতি আন্তরিক।