কাজী নেওয়াজঃ শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে।প্রচন্ড ঠান্ডায় শরীর শীতল হয়ে গেছে আমার।রক্তের চলাচল মৃদ গতি।চারদিকে অন্ধকার। আমি দাড়িয়ে অনুমান করার চেস্টা করছি কোথায় এসেছি আমি।চারদিক নিস্তব্ধ হালকা বাতাসে আমার ভেজা শরীর ভেদ করে মনেহচ্ছে বরফ দিয়ে আমাকে কেউ চেপে ধরেছে। হাত পা নড়াতে পারছিনা তবুও ভাবছি বেঁচেতো আছি।আমার সফরসঙ্গী বাকি দুজনার কি খবর জানিনা।তারা কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানিনা।তবে মনেমনে প্রার্থনা করছি তারা যেনো বেঁচে থাকে।দুপুরে রওনা হয়েছিলাম স্পীডবোটে কালাবাদর নদীর ওপারে একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। ফিরতে সন্ধ্যা নেমে আসে।
চলন্ত স্পীডবোটটি গুপ্তচড়ে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়।বোটম্যান নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি।আমি লাইফ জ্যাকেট পরা ছিলাম।নদীর ঢেউ তেমন না থাকলেও আমার বন্ধুকে বোটম্যানকে আমার কাছাকাছি দেখতে না পেয়ে আমি স্রোতের সাথে সাতার কাটতে কাটতে কোন স্হানে গিয়ে টের পাই আমি কূল পেয়েছি। শরীর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেস্টায় হেরে যাচ্ছে বোধহয়।মনের জোর দিয়ে যতক্ষণ টিকে থাকা যায়।অন্ধকারে এটুকু বুঝতে পেরেছি আমি কোন চড়ে এসেছি আশেপাশে কোন জনবসতি নেই।চারদিকে জল চড় জুড়ে ধানক্ষেত।শরীর শীতে কাঁপছে নিজেকে জীবিত রাখার উপায় খুজছি।
ভেজা প্যান্ট ও শার্ট খুলে নিংড়িয়ে ধানের ডগায় শুকাতে রাখলাম।ব্যায়াম শুরু করি।দড়ি লাফের মত প্রক্সি দিলাম।ধীরেধীরে শীতের সাথে আমার ভারসাম্য কিছুটা স্হিতিশীল হচ্ছে।চারদিকে কেউ নেই আমি একা এই নির্জন চড়ে ভয়ে বুক ধরফর করে।বারবার মনেহচ্ছে ধানক্ষেতের ভিতর থেকে একদল ছুটে আসা পায়ের শব্দ।পশু প্রানী না কি অন্যকিছু। পরিবেশ মূর্হুতেই ভয়ঙ্কর লাগে।ধানক্ষেতে গিয়ে লুকিয়ে থাকি। আমার থেকে মাত্র দুই ঘন্টা ব্যবধানে গড়ে ওঠা সভ্যতা ও আধুনিক শহর অথচ আমি নিজের সিচুয়েশনে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি। মৃত্যুর আগে মানুষের পৃথিবীর সব কাছের মানুষের কথা মনে পড়ে এমনকি শত্রুর কথাও মনে পড়ে।
এ মূর্হুতে আমারো সবার কথা মনে পড়ছে।বারবার নিজের চক্ষুর সামনে ভেসে আসে প্রিয়মুখগুলো।ধান গাছের গোড়া উগলে বসার ব্যবস্হা করে অপেক্ষা করি কখন সকাল হবে। প্যান্ট শার্ট কুয়াশার জলে আরো ভিজে গেছে।তবুও শরীর ঢেকে রাখার জন্য পরে নিলাম।দূর থেকে শিয়ালের ডাক শুনতে পাই।একটু আগুন জ্বালাতে পারলে ভাল হতো কিন্তু তা সম্ভব নয়। আমার কাছে কিছুই নেই।রাত গভীর হয় আর আমি শুধু সূর্যের অপেক্ষায় থাকি মৃত্যুর দোর গোড়ায় দাড়িয়ে।