গরিব ১০ জেলার ছয়টিই রংপুর বিভাগে: আবুল বারকাত

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে গরিব ১০টি জেলার ৬টিই রংপুর বিভাগে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠীর কারণে শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চল ও গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি যুগ যুগ ধরে চলা এ ধরনের বৈষম্য-বঞ্চনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঘুণেধরা রাজনীতিই রংপুর-রাজশাহী বিভাগের দারিদ্র্য-বৈষম্যের নেপথ্য কারণ।

শুক্রবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নবিষয়ক এই মতবিনিময় সভায় রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, কৃষক, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃৃতিক কর্মী, সাংবাদিক নেতারাসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় মানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন।

সভায় অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, যতদিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আয় বৈষম্য-সম্পদ-স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য নির্মূলের লক্ষ্যে নিয়ে বাজেটের আয় ও ব্যয় খাতের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন না করা হবে, ততদিন পর্যন্ত রংপুর-রাজশাহীর মতো পিছিয়েপড়া অঞ্চলসমূহের দারিদ্র্য ও দুর্ভোগের পরিসমাপ্তি ঘটবে না।

তিনি বলেন, কোনো সময়ই বাংলাদেশের কোনো জেলা কুড়িগ্রামের চেয়ে কম গরিব ছিল না, কোনো বিভাগই রংপুর বিভাগের চেয়ে কম নিঃস্ব-রিক্ত হতে পারেনি। এর প্রমাণ-দেশের গরিব ১০টি জেলার ৬টিই রংপুর বিভাগে।

আয়, ক্ষুধা, কর্মহীনতা, স্বল্পমজুরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু-প্রবীণ-নারী, ভূমিহীন, প্রান্তিক কৃষক, ভাসমান মানুষ, প্রতিবন্ধী, পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়, মঙ্গা, প্রান্তিকতা, সংখ্যালঘু, পশ্চাৎপদ, চরাঞ্চল, রাজনৈতিক দারিদ্র্য, সরকারের প্রতি আস্থা, মানসকাঠামোসহ দারিদ্র্যের যত রূপ ও ধরন আছে-তার সবই বাংলাদেশের পশ্চাৎপদতম রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিদ্যমান। তীব্র অনুন্নয়নসৃষ্ট এই দারিদ্র্য-বৈষম্যের নেপথ্যে ঘুণেধরা রাজনীতিই মূল কারণ। জাতীয় বাজেট বরাদ্দকালে এই দুই বিভাগের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ সে কথাই প্রমাণ করে।

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, দুর্ভিক্ষ, জাতিগত দাঙ্গা ও যুদ্ধপিড়িত ইথিওপিয়ার দারিদ্র্যের হার যেখানে ২৪ শতাংশ, সেখানে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ।

তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে রংপুর বিভাগে ৮২টি নদ-নদী রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার স্বীকৃত ৫৭টি আন্তঃনদ-নদীর মধ্যে রংপুর বিভাগে ১৮টি। এসব নদ-নদী একসময় দুই কোটি মানুষের জন্য আশীর্বাদ ছিল। কিন্তু সরকারি অবহেলার কারণে শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে আর বর্ষা মৌসুমে অতিবন্যায় এসব নদ-নদী এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

সভায় রংপুর অঞ্চলের বক্তারা বলেন, সারাদেশে গড় দারিদ্র্যের হার কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। কিন্তু রংপুর বিভাগের গড় দারিদ্র্যের হার না কমে বরং বেড়েছে ২ শতাংশ। সব পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার কৌশল এবং নীতির কথা বলা হলেও ২০১৬-২০১৭ থেকে ২০২১-২২-এর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে রংপুর বিভাগের জন্যে কোনো বিশেষ বরাদ্দই রাখা হয়নি। অন্যদিকে বাজেট বরাদ্দের যৎসামান্য রাজশাহী পেলেও এমনও হয়েছে যে একনেকে রাজশাহীর জন্য পাস হওয়া বরাদ্দ অন্য জেলাতে চলে গেছে।

বক্তারা নদ-নদীর খনন ও পরিচর্যার পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করে রংপুর বিভাগের দারিদ্র্য দূর করার আহ্বান জানান। তারা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিশেষ কিছু কৃষিপণ্যে ভর্তুকি ও সহজ শর্তে ঋণ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, হস্তশিল্প, বেনারসি শাড়ি, সাবান, হিমাগার, রাবার চাষ, প্লাস্টিক সামগ্রী, চট-সুতলি, দুগ্ধ খামার, স্বাস্থ্যসেবা, রপ্তানিমুখী চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, অটোরাইস মিল, সার তৈরি, মৎস্য খামার, ইটভাটা, সবজি ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার, বনায়ন, চা, পাট, নৌযান, সেচযন্ত্র, হ্যাচারি, পাথর ও অবকাঠামোগত দ্রব্যাদি উৎপাদন শিল্প এবং গবেষণা ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেন।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির নেতারাসহ অধ্যাপক ড. ফরিদ খাঁন, অধ্যাপক. ড. তুহিন ওয়াদুদ, অধ্যাপক. জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক. হারুন-আল-রশীদ, অধ্যাপক. হাসনুর রশিদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।