#

আট বছর আগে শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে হত্য করা হয়।হত্যার আট বছর হলেও শেষ হয়নি মামলাটির বিচার কার্যক্রম। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মামলার শেষ দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সাক্ষ্য দিলেই শেষ হবে এই মামলার বিচার কার্যক্রম। কিন্তু তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। এদিকে আট বছরেও হত্যার বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশায় নিহতদের পরিবার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাকিলা জিয়াসমিন মিতু জাগো নিউজকে বলেন, ছয় ছাত্র হত্যা মামলাটির ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। মামলার শেষ দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে না আসায় মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না। তারা সাক্ষ্য দিলে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, এদের মধ্যে দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম। তাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তিনবার সমন জারি করা হয়েছে। তিনি অবসরে গিয়েছেন। তাই তার কর্মস্থলের ঠিকানায় তাকে পাওয়া যায়নি। আমরা এখন তার ঢাকার পল্লবীর বাসার ঠিকানায় সমন পাঠিয়েছি। তার সাক্ষ্য শেষ হলে তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা অথাৎ শেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমন জারি করা হবে। তিনি সাক্ষ্য দিলে মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা হবে।

নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের শিকার শেখ মোহাম্মদ টিপুর মা নাজমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, এখনও মামলাটির বিচার শেষ না হওয়ায় আমাদের পরিবার হতাশাগ্রস্ত। বিচার শেষ হতে আর কত সময় লাগবে- প্রশ্ন নাজমা বেগমের।

নিহত ইব্রাহীম খলিলের ছোট ভাই ইউসুফ আলী বলেন, আট বছরেও মামলাটির বিচার শেষ না হওয়ায় আমরা হতাশ।আমার মা বিউটি আক্তার ছেলের শোকে পাঁচ মাস আগে মারা গেছেন। আমার মা চেয়ে ছিলেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে। কিন্তু তা আর হলো না। আমার জীবনদশায় বিচার দেখে যেতে পারব কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

নিহত কামরুল জামান কান্তর বাবা আব্দুর কাদের সুরুজ বলেন, হত্যার বিচার দেখার আশায় পথ চেয়ে আছি। কিন্তু আট বছরেও বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশায় রয়েছি। রাষ্ট্রের উচিত দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করা।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফাইজুন্নেছার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে। মামলায় ৯২ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশি গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহতরা হলেন- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাপললিফের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শামীম (১৮), মিরপুর বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ (২০), একই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল (২১), উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত (১৬), তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান (১৯) ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবির মুনিব (২০)।

ঘটনার পর নিহতদের বিরুদ্ধেই ডাকাতির অভিযোগ এনে গ্রামবাসীর পক্ষে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন আব্দুল মালেক নামে এক বালু ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে ছয় কলেজছাত্র হত্যাকাণ্ডে ৬০০ গ্রামবাসীকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন।

২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই বছরের ৮ জুলাই মামলার ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জশিট) গঠন করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলালউদ্দিন।

চার্জশিটভুক্ত ৬০ আসামি হলেন- ডাকাতি মামলার বাদী আব্দুল মালেক, সাঈদ মেম্বর, আব্দুর রশিদ, ইসমাইল হোসেন রেফু, নিহর ওরফে জমশের আলী, মীর হোসেন, মজিবর রহমান, কবির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রজুর আলী সোহাগ, আলম, রানা, আ. হালিম, ছাব্বির আহম্মেদ, আলমগীর, আনোয়ার হোসেন আনু, মোবারক হোসেন, অখিল খন্দকার, বশির, রুবেল, নূর ইসলাম, আনিস, সালেহ আহমেদ, শাহাদাত হোসেন রুবেল, টুটুল, অখিল, মাসুদ, নিজামউদ্দিন, মোখলেছ, কালাম, আফজাল, বাদশা মিয়া, তোতন, সাইফুল, রহিম, শাহজাহান, সুলতান, সোহাগ, লেমন, সায়মন, এনায়েত, হায়দার, খালেদ, ইমান আলী, দুলাল , আলম, আসলাম মিয়া, শাহীন আহমেদ, ফরিদ খান, রাজীব হোসেন, হাতকাটা রহিম, মো. ওয়াসিম, সেলিম মোল্লা, সানোয়ার হোসেন, শামসুল হক ওরফে শামচু মেম্বার, রাশেদ, সাইফুল, সাত্তার, সেলিম ও মনির ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন