খুদে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মিলন মেলা

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ত্রয়োদশ ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াডে’র চূড়ান্ত আসর। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর ও সমকালের যৌথ আয়োজনে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে বসে দেশসেরা অর্ধসহস্রাধিক খুদে জ্যোতির্বিজ্ঞানীর মিলন মেলা। সেখান থেকে সিনিয়র ও জুনিয়র গ্রুপে সেরা নির্বাচিত হয় ২০ জন।

বিকেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার পি ডেমিন, সমকালের উপ-সম্পাদক আবু সাঈদ খান। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের সংগঠক জনার্দন দত্ত নান্টু, সঙ্গীত শিল্পী শেখ শাহেদ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর মাসুদুর রহমান। অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ আয়োজনে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডে। ১৬টি আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডের ৫৫০ বিজয়ীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় চূড়ান্ত আসরে।

গতকাল চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী সিনিয়র গ্রুপে সেরা দশ হলো যথাক্রমে অর্ণব চৌধুরী, জাবের ইবনে তাহের, আবদুল্লাহ আল হাসিব, তুনক মণ্ডল, নাহিদ হাসান, তাহমিদ আওয়াল, মো. ফাহিম, কাজী রিয়াজুল হাসান, নাইম ফেরদৌস ও বকতিয়ার মাহবুব।

জুনিয়র গ্রুপে বিজয়ী সেরা দশ হলো যথাক্রমে মুসা আহমেদ, পল্লব কান্তি পাল, আবদুল্লাহ আল মাহিম, সিরাত মাহমুদ সাদ, প্রিতম কৃষ্ণ কুণ্ডু, ফাহিম হাসান মাহাদি, রাফিদ জামান খান, আতিব আফসার, সামান সামিদ ও রউফুল ইসলাম।

বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে মেডেল, সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সিনিয়র গ্রুপের প্রথম পাঁচ বিজয়ী রাশিয়ান সরকারের বৃত্তিতে অ্যাস্ট্রোনমি, অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা অন্য কোনো বিষয়ে সে দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া উভয় গ্রুপ থেকে শীর্ষ ৩২ জনকে নিয়ে পরবর্তীতে ক্যাম্প তৈরি করা হবে। সেখান থেকে সেরা নয় বাছাই করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াডে পাঠানো হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়ন অভিযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ যাত্রাকে আরও বেগবান করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এটা আশঙ্কাজনক।’

মহাকাশ নিয়ে চর্চা বাড়ানোর জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। আগামীতে প্রতি উপজেলায় টেলিস্কোপ দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

আবু সাঈদ খান বলেন, ‘আজকের খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আগামী দিনের আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং, সত্যেন বোস, জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানী তৈরি হবে। তবে সবাইকে বিজ্ঞানী হতে হবে তা নয়। বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। সমাজে জমাট বাঁধা কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ দূর করতে বিজ্ঞানমনস্ক আলোকিত মানুষের বিকল্প নেই।’

আলেকজান্ডার পি ডেমিন বলেন, ‘জ্ঞান ও সক্ষমতা যাচাইয়ে অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করবে। এ আয়োজনের অংশ হতে পেরে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার খুবই গর্বিত।’ আগামীতেও অ্যাস্ট্রোনমি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

এর আগে সকালে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। যদি শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস না হয়, তাহলে ‘বিগ ব্যাংয়ের’ সময় যে মহাবিস্ম্ফোরণ হয় তার শক্তি কোথা থেকে এলো; আলো কোনো বস্তুর ওপর পড়লে তার বিপরীত দিকে ছায়া পড়ে, এখন কোনো বস্তু যদি আলোর বেগে গতিশীল হয় তাহলে কি ওই বস্তুটির কোনো ছায়া তৈরি হবে- এ রকম মজার সব প্রশ্ন করেন আগামী দিনের অ্যাস্ট্রোনমিস্টরা। উত্তর দেন জাদুঘরের কিউরেটর (একাডেমিক) সুকল্যাণ বাছাড়।

এবারের অলিম্পিয়াডের সহযোগী হিসেবে ছিল বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, রুশ দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগ; যুব কার্যক্রম পার্টনার ডেইলি স্টার ইউথ এবং মিডিয়া পার্টনার একাত্তর টেলিভিশন।