#

ট্রফি হাতে নিয়ে ভারতের মেয়েরা উৎসবে মত্ত। কনফেত্তি উড়ল অভিকা, সিল্কিদের মাথার ওপর। পাশে দাঁড়িয়ে সেই উৎসব চেয়ে চেয়ে দেখল বাংলাদেশ। অথচ মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব ১৫ টুর্নামেন্টের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি ছিল মারিয়া মান্দাদের সামনে। কিন্তু তাদের পুড়তে হলো স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। ফাইনালে বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। ৬৭ মিনিটে একমাত্র গোল করেছে সুনীতা মুনডা।

উৎসবের আগাম প্রস্তুতি নিতে ভুটানের প্রবাসী বাঙালিরা নিয়ে এসেছিল পতাকা। বাংলাদেশের মেয়েদের অভিনন্দন জানানো ডিজিটাল ব্যানার-প্ল্যাকার্ডও ছিল। কিন্তু থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে আসা শ’দু-এক বাংলাদেশিদের স্তব্ধ করে দিয়ে উৎসব করল ভারতের মেয়েরা। শুধু ফেয়ারপ্লে ট্রফিটা জিতেছে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ গোলদাতা চারজন হলেও শেষ পর্যন্ত লটারিতে পুরস্কারটা পেয়েছে বাংলাদেশের তহুরা।

গত বছর ঢাকায় কমলাপুর স্টেডিয়ামে এই ভারতকেই ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার সেই হারের প্রতিশোধ কী দারুণভাবেই না নিল ভারত! বাংলাদেশের মেয়েদের আর টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতা হলো না।

ফাইনালে উজ্জীবিত হয়েই খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু কোথায় কী? বরং বাংলাদেশের চেয়ে বেশি উজ্জীবিত মনে হয়েছে ভারতের মেয়েদের। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছিল ২২টি গোল। ফাইনালের আগে গোলরক্ষক মাহমুদাকে সেভাবে পরীক্ষার মুখোমুখিই হতে হয়নি। কিন্তু অগ্নিপরীক্ষার ম্যাচেই ব্যর্থ মাহমুদা। যে দলে এত এত গোল স্কোরার সেই বাংলাদেশ আসল সময়েই জ্বলে উঠতে পারল না! চাপের কাছে ভেঙে পড়ল। গোলের মুখে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলল তহুরা, সাজেদা। বেশির ভাগ সময়ই মনিকা, মারিয়া, তহুরাদের কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিল ভারতের ফুটবলাররা। গত ম্যাচগুলোর মতো কেউই ছন্দে খেলতে পারেনি। বাংলাদেশ ভারতের পোস্টে ১১ বার শট নিয়ে একটা গোলেরও দেখা পায়নি। অথচ ভারত গোলে শট নিয়েছিল ৪টি, এর একটিতেই সফল।

ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে চাপে রাখে ভারত। ৪ মিনিটেই বাংলাদেশের জালে ঢুকতে পারত বল। বক্সের সামনে থেকে ভারতীয় মিডফিল্ডার অভিকা সিংয়ের ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে সিল্কি দেবীর জোরালো শট গোলরক্ষক মাহমুদা কর্নারের বিনিময়ে ফেরায়। ১৭ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ কিন্তু তহুরার দুর্বল হেড ধরে ফেলে ভারতের গোলরক্ষক মনীষা।

গত তিন ম্যাচে যেভাবে খেলেছে বাংলাদেশ, আজ এর ছিটেফোঁটাও খেলতে পারেনি। মাঝমাঠটা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে ভারতের মেয়েরা। মনে হয়েছে কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগছিল মারিয়া-আঁখিরা। বারবার ভুল পাস দিয়েছে। আগের ম্যাচগুলোর মতো পাসিং ফুটবলের পসরা সাজাতে পারছিল না। আর প্রত্যাশার চেয়েও যেন ভালো খেলেছে ভারত।

৪৩ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে শামসুন্নাহারের ক্রস, ভারতীয় গোলরক্ষক মনীষাকে একা পেয়েও সাজেদা বল তুলে দিলেন গোলপোস্টের ওপর দিয়ে! ৬১ মিনিটে তহুরার ক্রস শামসুন্নাহার বাইরে মারল। এরপর ৬৭ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে সুনীতা মুনডার ভলি, মাহমুদার মাথার ওপর দিয়ে গেল জালে। যদিও গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ৭৬ মিনিটে মনিকার শট ক্রসবারে লাগলে আফসোসই বেড়েছে বাংলাদেশের। শেষ মিনিটে রোজিনার ক্রসে তহুরা আরেকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বল মাথায় লাগালেও বাইরে চলে গেল।

বাংলাদেশ দল : মাহমুদা, আনাই, শামসুন্নাহার সিনিয়র, নাজমা, আঁখি, নীলা (ঋতুপর্ণা), মনিকা, মারিয়া, আনুচিং (রোজিনা), তহুরা, সাজেদা (শামসুন্নাহার জুনিয়র)।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন