#

প্রস্তুতির ঘাটতির কথা মুমিনুল হক একবার স্বীকার করলেন। আরেকবার আড়াল করতে চাইলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা প্রত্যেকে ব্যস্ত ছিলেন সাদা বলের ক্রিকেট নিয়ে।

Google news
বিপিএল খেলার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমে টি-টোয়েন্টি ও পরে ওয়ানডে সিরিজ খেলেন ক্রিকেটাররা। এরপর সোজা লাল বলের ক্রিকেটে। যারা আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলেননি তারা খেলেছেন ঢাকা লিগ। ফলে লাল বলের প্রস্তুতি একদমই ছিল না। ওয়ানডে সিরিজ শেষে মাত্র দুদিনের প্রস্তুতি শেষেই সিলেটে মাঠে নামেন ক্রিকেটাররা।

৩২৮ রানের হারের পর প্রস্তুতির ঘাটতির কথা স্বীকার করেছিলেন অধিনায়ক শান্ত। মিরাজও একদিন স্কিলের পাশাপাশি প্রস্তুতির কথা বলেছিলেন।

 

মঙ্গলবার মুমিনুলও একই সুরে সুর মেলালেন, ‘অনেকদিন পরে টেস্ট…আমি যদি বলি অনেকদিন পরে টেস্ট তাহলে আপনার কাছে এটা একটা অজুহাত। কিন্তু দিনশেষে এটা গোনায় ধরতে হতে পারে। আবার আমি যদি বলি অনেকদিন পর তাহলে আপনি পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে, আমার তো সমস্যা হয়নি। আমার সমস্যা হয়নি কিন্তু যারা খেলছে তারা প্রত্যেকে সাদা বলে খেলে আসছে। মানে এটা বাস্তব। জিনিসটা নেতিবাচক মনোভাবে হলেও কিন্তু অনেক সময় সত্য হয়। আমার কাছে তাই মনে হয়।’

আরেক প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য মুমিনুল প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেন। তার দাবি, চার দিনের ম্যাচ খেলে যেমন প্রস্তুতি নেওয়া যায় ঠিক তেমননি সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেও প্রস্ততি নেওয়া যায়, ‘আমার কাছে মনে হয় প্রস্তুতি কম ছিল না। সাদা বলে তো সবাই খেলছে। সবাই যার যার মতো খেলেছে। প্রস্তুতি তো চার দিনের খেললেও হবে আবার একদিনের ক্রিকেট খেললেও হবে।’

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ইনিংসের আগে শেষ পাঁচ ইনিংসে দলীয় রান দুইশ স্পর্শ করেনি। ব্যাটসম্যানরা টানা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক চিত্র এটি। সঙ্গে যোগ করা ভালো এ সময়ে ব্যক্তিগত অর্জনগুলো আড়াল হয়ে গেছে। যেমনটা হয়েছে সিলেটে মুমিনুলের অপরাজিত ৮৩ রান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মাঝারিমানের স্কোর গড়ে নিজের মান রাখলেও বাকিরা একেবারে নিষ্প্রভ। কোথায় ঘাটতি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মুমিনুলের চোখে ধরা পড়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান।

তার কাঠগড়ায় দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মানের আকাশ পাতাল পার্থক্য দাবি করেছেন তিনি, ‘শুনতে খারাপ লাগবে কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট ও টেস্ট ম্যাচ খেলার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আকাশ পাতাল তফাৎ। আপনারাও জানেন। আমিও জানি। সবাই জানে। এটা অজুহাত নয়। আমি নিজেও জাতীয় লিগ খেলি। ওখানে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয় না, এখানে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়। আমার কথা হয়তো অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি সততার জায়গা থেকে কথাগুলো বলছি।’

সুযোগ থাকলেও সিনিয়র ক্রিকেটাররা দেশের প্রথম শ্রেণির দুটি প্রতিযোগিতা জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ এড়িয়ে চলেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে সারাবছর ব্যস্ত থাকেন। তবে সুযোগ পেলে অনেকেই এড়িয়ে চলেন। সেক্ষেত্রে তাদের টেস্ট প্রস্তুতি বলতে ম্যাচের আগে দুই তিন সেশন অনুশীলন। টেস্টে এই অবস্থার থেকে উন্নতির জন্য বোর্ডের কিংবা নিজেদের একাগ্রতার ঘাটতি দেখেন না মুমিনুল, ‘সবাই চিন্তা তো করেই। বোর্ড চিন্তা করছে। বিশ্বকাপের পর টেস্ট ম্যাচের চেয়ে ওয়ানডের সংখ্যা কম। স্বাভাবিকভাবে সবাই সাদা বলের চেয়ে লাল বলের চিন্তা অনেক বেশি করবে।’

স্কোয়াডে এখন সিনিয়র ক্রিকেটারদের থেকে তরুণ ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেশি। জাকির, জয়, শাহাদাতরা প্রতিশ্রুতিশীল। তাদের নিবেদনে ঘাটতি দেখেন না মুমিনুল। বরং তাদের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান তার, ‘অবশ্যই দেখি (সুন্দর ভবিষ্যৎ)। এখন যারা আছে সবাই টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত। সত্যি কথা বলি, ফল না এলে অনেক কিছুই মনে হয়। কিন্তু এখন যে তরুণ দলটা আছে, তাদের টেস্ট খেলার প্রতি খুবই আগ্রহ, খুবই নিবেদিত।’

‘যারা আছে সবাই জাতীয় লিগে নিয়মিত খেলে। ওদের একটা জিনিস ভালো, ওরা অনেক নিবেদিত। ওদের মধ্যে ক্ষুধা অনেক বেশি। জয় আর দিপু (শাহাদাত) অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা খেলোয়াড়। চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় হওয়া কিন্তু এত সহজ নয়। ওদের মধ্যে সেই নিবেদন সবসময় দেখি। ওদের নিবেদনে কোন সমস্যা নেই। ওরা যত টেস্ট খেলবে, ততো অভিজ্ঞ হবে, ততো ভালো খেলার সুযোগ বেশি থাকবে।’-আরও যোগ করেন মুমিনুল।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন