কর্মসংস্থান তৈরিতে হচ্ছে অধিদফতর

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

কর্মসংস্থান তৈরির জন্য ‘কর্মসংস্থান অধিদফতর’ নামে একটি অধিদফতর গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে করা হচ্ছে ‘কর্মসংস্থান অনুবিভাগ’।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, এ বিষয়ে গবেষণা, কর্মসংস্থান নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি, নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কর্মসংস্থান অধিদফতর ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর কর্মসংস্থান অধিদফতর গঠনে একটি কমিটি ও তিনটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে কমিটিগুলো প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম বলেন, ‘মানুষের কর্মসংস্থান যেন আরও বেশি হয়, ডিসিপ্লিন ওয়েতে হয়, সেজন্য কর্মসংস্থান অধিদফতর করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা ছাড়াও দক্ষ জনবল আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়- সে বিষয়গুলো দেখবে অধিদফতর। আশা করি অধিদফতর গঠিত হলে কর্মসংস্থান আরও ত্বরান্বিত হবে।’

‘অধিদফতরের পূর্ণাঙ্গ একটা ডাটাবেজ থাকবে। কোন সেক্টরে কী পরিমাণ পদ খালি আছে, কর্মসংস্থানের কী ব্যবস্থা- ডাটাবেজে সেগুলো থাকবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কাজের ধরন পরিবর্তন হবে। কর্মের প্রকৃতি পরিবর্তন হলে কী ধরনের সুযোগ তৈরি হবে, সেসব বিষয়ে গবেষণা করবে কর্মসংস্থান অধিদফতর।’

সচিব আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধির মধ্যে কর্মসংস্থানের বিষয়টি থাকলেও এতদিন সেটি করা যায়নি। এখন অধিদফতর গঠনের মাধ্যমে আমরা সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’

শ্রমের সঙ্গে সমানভাবে কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তা করতে পারছে না। উন্নয়ন অনুবিভাগের অধীনে একটি শাখা ও অধিশাখা রয়েছে। কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দেয়ায় অধিদফতর গঠনের পাশাপাশি এ বিষয়ে অনুবিভাগ করা হচ্ছে।

অনুবিভাগ হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রকৃতির নির্দিষ্ট দায়িত্বাবলি পালনের জন্য গঠিত কোনো মন্ত্রণালয়/বিভাগের স্বয়ংসম্পূর্ণ কার্য বিভাগ, যার প্রধান একজন যুগ্ম-সচিব/যুগ্ম-প্রধান বা অতিরিক্ত সচিব।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শ্রমিক ও মালিকদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের একটা অংশ। শ্রম পরিস্থিতি ভালো রাখা, শ্রম পরিস্থিতি উন্নত রাখা, শ্রম বিষয়ে আইন-কানুন ও বিধি-বিধান তৈরি করা এবং সেটা বাস্তবায়ন করা এ অংশের কাজ। আরেক অংশের কাজ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, কর্মে নিয়োগ দেয়া নয়। মন্ত্রণালয় এতদিন যে কাজ করে আসছে তা শ্রমবিষয়ক। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান নিয়ে সেভাবে কাজ হয়নি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একসঙ্গে ছিল। তখন যে ট্রেনিং সেন্টারগুলো ছিল, আলাদা হওয়ার পর সেগুলো চলে গেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরির জন্য আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই।’

অধিদফতর গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম) রেজাউল হক  বলেন, ‘কর্মসংস্থান কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেজন্য আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী তৈরি করতে হবে। তবেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দক্ষ কর্মী থাকলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উন্নতির দিকে যাবে, এক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘কর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলেও ট্রেনিং দিতে হবে। এটা করা গেলে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এটাও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। মালিকদের কাছেও আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে হবে। আমাদের মোটিভেশনাল অ্যাক্টিভিটিসও করতে হবে।’

‘শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং মালিক, শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অধিদফতর গঠন করতে যাচ্ছি আমরা। অধিদফতরের অধীনে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অধিদফতর করলে কাজের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে। এখন মন্ত্রণালয়ে কর্মসংস্থান শাখা রয়েছে, তখন এটা দিয়ে হবে না। সেজন্য কর্মসংস্থান উইংও করা হবে।’

কর্মসংস্থান অধিদফতর গবেষণার কাজও করবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে অনুযায়ী আমাদের কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়ে গবেষণা করবে কর্মসংস্থান অধিদফতর। আগামীর করণী বিষয়ে পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করবে তারা।’

রেজাউল হক বলেন, ‘কর্মসংস্থান অধিদফতর গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর কর্মসংস্থান অধিদফতর গঠনবিষয়ক একটি কমিটি ও তিনটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৮ অক্টোবর সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তুত, নতুন পদ সৃজনের যৌক্তিকতা, নিয়োগবিধি প্রণয়ন, মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো সংক্রান্ত প্রতিবেদন সচিবের কাছে জমা দিয়েছে কমিটিগুলো। আমরা এখন এটি পর্যালোচনা করছি, গত ২৮ অক্টোবর একটি সভাও হয়েছে। এরপর আমরা এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠাব।’

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘অন্যান্য অধিদফতরের মতো কর্মসংস্থান অধিদফতরেরও প্রধান নির্বাহী হবেন মহাপরিচালক। অধিদফতরের কেন্দ্রীয় অফিস হবে ঢাকায়। প্রাথমিকভাবে আটটি বিভাগে অধিদফতরের অফিস করা হবে। একই সঙ্গে আট বিভাগে আটটি ট্রেনিং সেন্টারও করা হবে। পরে জেলা পর্যায়ে অফিস স্থাপন করা হবে। খসড়া প্রস্তাবে এমনই বলা হয়েছে।’