এক-এগারোর শিক্ষা : পরস্পরের ওপর চলছে দোষারোপ

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। সেই এক-এগারোর এক দশক পেরিয়ে গেলেও রাজনৈতিক দলগুলো ওই ঘটনা থেকে কিছুই শিখতে পারেনি বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।

তারা মনে করেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত ও নিজেদের মাঝে সমঝোতা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। গণতন্ত্রকে সুসংহত করার বদলে বিগত এগারো বছরে উল্টোপথেই যাত্রা ছিল দলগুলোর। যদিও গণতন্ত্রকে সুসংহত এবং এ ধরনের ক্ষমতা গ্রহণের বিপরীতে অবস্থান নেয়ার দায়িত্ব মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব ছেড়ে দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমদ। তৎকালীন সেনা কর্মকর্তাদের সমর্থনে ওই নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই ঘটনার পর দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না বলে জানিয়েছেন। তবে বরাবরের মতোই পরস্পরকে দোষারোপ করছেন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তারা গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে এগিয়ে যেতে চান বলে দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ওই যে একটা ধাক্কা লেগেছিল, তা থেকে আমরা কিছু শিখিনি। কিছুই আমরা গ্রহণ করিনি। আমাদের আচরণে, চিন্তায়, কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসে নাই বরং উল্টো দিকে গিয়েছি আমরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘সেনা শাসকের যুগ এখন আর নেই। কারণ ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রাজনীতিকদের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে নানা অজুহাতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করত এবং তার সঙ্গে রাজনৈতিক মহলগুলোর কোনো কোনো অংশ সহযোগিতা দিত। সেই প্রবণতা আজকে কমেছে। সেই জায়গায় যদি সত্যিকার অর্থে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়, সেখানে যখন অরাজকতা-নৈরাজ্য চলে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেখানে কিন্তু একটা সুযোগ থাকে যখন তাদেরকে আসতে বলা হয়।’

তিনি বলেন, সেই ধরনের ঘটনা যেন না হয় সেটা দেখার কর্তব্য প্রধানত রাজনৈতিক দলগুলোর। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সুসংহত হয়ে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা ও সামাজিক চুক্তি অত্যন্ত বেশি করে প্রয়োজন, যাতে কোনো তৃতীয় শক্তি বা বর্হিশক্তি রাজনীতিকে একটা প্রতিকূল অবস্থায় না ফেলতে পারে। সেটা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সংবিধানকে আঘাত করা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্র হত্যা ও সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্রগুলোকে পাল্টে দেয়া এ কাজগুলো শেখ হাসিনা সরকার করেছে। কারণ ওই সরকার তো আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল। দুইটা সরকারই তো একাকার। সেদিন যে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করা হলো, সংবিধানকে যে আঘাত করা হলো ওই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। গোটা জাতি এখন গণতন্ত্রহীন অবস্থায় আছে, ভয়-আতঙ্কের মধ্যে আছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে। গণতন্ত্রের নামে খালেদা জিয়ার একদলীয় শাসনব্যবস্থা এবং সাম্প্রদায়িক শাসনব্যবস্থা আমরা মোকাবেলা করেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বিকশিত করা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে উজ্জ্বলতর জায়গায় নিয়ে যাওয়া। কাজেই জিয়া-এরশাদ বা ওয়ান-ইলেভেনের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।