১৯৮৬ সালের ২২ জুন, মেক্সিকোতে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। আটলান্টিক মহাসগারে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ৭৪ দিন ধরে চলা যুদ্ধ সমাপ্তির চার বছর ৮ দিন পর। স্বাভাবিকভাবে এই ম্যাচে রাজনৈতিক বিদ্বেষের একটা আভাস ছিল। কঠিন এই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পান তিউনিসিয়ার রেফারি আলী বিন নাসের। এই ম্যাচেই হয়েছিল বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়া ডিয়েগো ম্যারাডোনার দুটি গোল। বুধবার আর্জেন্টাইন গ্রেটের মৃত্যুর পর তাকে প্রশংসায় ভাসালেন বিন নাসের।
মেক্সিকোতে যুদ্ধসম ওই শেষ আটের ম্যাচে ৫১ মিনিটে ইংল্যান্ড গোলকিপার পিটার শিল্টনের চেয়ে উঁচুতে লাফিয়ে ঐতিহাসিক গোল করেন ম্যারাডোনা। ফকল্যান্ড যুদ্ধে আর্জেন্টিনারের হারে প্রতিশোধের নেশায় টগবগে ফুটতে থাকা অধিনায়ক বেশ চতুরতার সঙ্গে গোলটা করেছিলেন হাত দিয়ে। শিল্টন তা খেয়াল করলেও আলী তা বুঝতেই পারেননি। পরে ম্যারাডোনা ওই গোল নিয়ে বলেছিলেন, ‘গোলটা হয়েছিল কিছুটা ঈশ্বরের হাত দিয়ে, আর কিছুটা ম্যারাডোনার বুদ্ধি দিয়ে।’
‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে করা গোলটি নিয়ে যে বিন নাসেরের সন্দেহ হয়নি, তা নয়। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর এএফপিকে বলেছেন সেই কথা, ‘আমি হাত দেখতে পেয়েছিলাম না, কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছিল। ছবিগুলোতে দেখতে পাবেন, কী হয়েছিল জানতে আমি আমার সহকারী বুলগেরিয়ার (বোগদান) দোচেভের কাছে ফিরে গিয়েছিলাম। যখন তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি তখন গোল দিলাম।’
ইংল্যান্ড সমতা ফেরানোর পর ম্যারাডোনার জয়সূচক গোলটি পেয়েছিল ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ খেতাব। বিন নাসেরের চোখে ওই গোলটি ছিল ‘মাস্টারপিচ’। ৭৬ বছর বয়সী এই সাবেক তিউনিসিয়ান রেফারি জানান, ওই ম্যাচের পর ফিফা তাকে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়েছিল। যে কোনও কঠিন ম্যাচে ফিফা তাকেই দিয়েছে দায়িত্ব। বিন নাসের বললেন, ‘আমি তার আগেই, ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের ম্যাচে রেফারিং করেছিলাম। ফিফার কঠিন মিশনে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। এই ম্যাচে আমাকে ফিফা ৯.৪ নম্বর দিয়েছিল। আমি তা-ই করেছি, যা আমার করার দরকার ছিল। কিন্তু সন্দেহ ছিল- দোচেভ পরে বলেছিলেন, তিনি দুটি হাত দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা শিল্টনের নাকি ম্যারাডোনার, তা বোঝেননি।’
ওই বিশ্বকাপ জয়ের ২৯ বছর পর ম্যারাডোনা যান তিউনিসিয়ায়। সেখানে গিয়ে বিন নাসেরের সঙ্গে দেখা করতে ভোলেননি তিনি। ২০১৫ সালের ওই সফরে তাকে একটি স্বাক্ষর করা টি-শার্ট দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন গ্রেট, যাতে লেখা ছিল, ‘আমার চিরদিনের বন্ধু আলীকে।’ ম্যারাডোনার সঙ্গে দারুণ সময় কেটেছিল বিন নাসেরের, ‘আমাদের সময়টা ভালো কেটেছিল। ওই দিন আমি তাকে বলেছিলাম- ওই বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা নয়, জিতেছিলে তুমি ম্যারাডোনা। সে ছিল একটা প্রতিভা, একজন ফুটবল লিজেন্ড। রেফারি হিসেবে তার সামনে আমি এক সেকেন্ডের জন্যও আমার চোখ বন্ধ হতে দেইনি, কারণ সে যে কোনও কিছু করতে পারতো।’