আল্লুর ‘পুষ্পা’-তে আলোচিত লাল চন্দনের এত চাহিদা কেন?

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

চন্দন কাঠের নাম শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এই কাঠের বহুল ব্যবহার হয়। তবে সম্প্রতি ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ সিনেমা মুক্তির পর থেকে নতুন করে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে এই চন্দন কাঠ। সাদা চন্দনের কথা তো জানেন। এবার আলোচনায় লাল চন্দন।

‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ সিনেমার গল্প রক্ত চন্দন বা লাল চন্দন কাঠ পাচার নিয়ে। সিনেমায় পুষ্পা রাজ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল্লু অর্জুন। তিনি কীভাবে লাল চন্দনের কাঠ পাচার করে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন সেই গল্পই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমার শুরুতে দেখানো হয়েছে কীভাবে লাল চন্দন ভারত থেকে পাচার করা হয় এবং সেই কাঠ থেকে তৈরি করা হয় জাপানের সবচেয়ে দামী বাদ্যযন্ত্র।

সিনেমার একটি দৃশ্যে পাচারের উদ্দেশ্যে লাল চন্দন গাছ কেটে রাখা হয়েছে

‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ সিনেমার আগেও লাল চন্দনের কাঠ চোরাচালান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পত্রিকায় এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদনও হয়েছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের গভীর জঙ্গলে পুলিশি অভিযানে ২০ চন্দন চোরাকারবারি নিহত হয়। সেদিন অন্ধ্র পুলিশের টাস্কফোর্স গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল শত শত চোরাকারবারি ও কুলি লাল চন্দনের বনে জড়ো হয়েছে। তাদের ধরতে টাস্কফোর্স যখন জঙ্গলে হানা দেয়, তখন কুড়াল-ছুরি-পাথর-লাঠিসোঁটা নিয়ে চোরাকারবারিরা পুলিশকে আক্রমণ করলে তারাও পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়। ঘটনাটি স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। কারণ নিহতরা প্রায় সবাই পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুর ইরোড ও ভেলর জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

রূপচর্চা ছাড়াও বিভিন্ন কাজে চন্দনের ব্যবহার হয়ে থাকে। ভারতীয় পুরাণে চন্দনকে ধর্মীয় সম্মান দেওয়া হয়েছে। শুধু বিশ্বাসের ওপর হিন্দু ধর্মে চন্দনের বহুবিধ ব্যবহার দেখা যায়। হিন্দু ধনী ব্যক্তিরা মারা গেলে চন্দন কাঠ দিয়ে দাহ করার ঐতিহ্য বহুকাল ধরে চলে আসছে। মহা মূল্যবান এই চন্দন কাঠের খাটিয়া বানিয়ে ঘুমানোর খায়েশও অনেকের আছে। কিন্তু খায়েশ থাকলেই তো হবে না, সামর্থ্যও থাকতে হবে। কেননা একটু ঘ্রাণ নেবার জন্য খাঁটি চন্দন যেখানে মেলে না, সেখানে খাটিয়া বানানোর জন্য তো বিষয়টি আরো কঠিন।

অন্যদিকে, পূজায় ব্যবহৃত লাল চন্দন অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস— লাল চন্দন ঘরেও সুখ আনে। এর ব্যবহার জীবনে আনে অপার সুখ।

লাল চন্দন একটি ছোট গাছ, যা উচ্চতায় ৫-৮ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং গাঢ় লাল রঙের হয়, যা বড় হতে ৭-১২ বছর সময় নেয়। এ গাছ সাধারণত আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের পাতা বিপরীত, ৩ থেকে ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ফুল হলুদ।

সাধারণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলার শেষাচলম জঙ্গলে মেলে এই লাল চন্দন। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক– এই তিন রাজ্যের সীমান্ত এসে মিলেছে এই ঘন জঙ্গলে। আন্তর্জাতিক বাজারে এক টন লাল চন্দন কাঠের দাম ৮০ লাখ থেকে থেকে দুই কোটি টাকা। বিশেষ করে চীন ও জাপানের মতো দেশে লাল চন্দন এবং এই কাঠ থেকে তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি বেশিরভাগই বাদ্যযন্ত্র, আসবাবপত্র, ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। লাল চন্দন থেকে তৈরি হস্তশিল্পের জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা সবসময়ই থাকে।

সিনেমায় এভাবেই লাল চন্দন গাছের পাচার ঠেকাতে পুলিশ কাজ করে 

ইনস্টিটিউট অব উড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মতে, এই উদ্ভিদ শরীরকে শীতল করে, জ্বালাপোড়া কমায়, রয়েছে রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণও। মাথাব্যথা, চর্মরোগ, জ্বর, ফোঁড়া, বৃশ্চিকের দংশনে চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত হয় এটি। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতেও লাল চন্দনের অবদান রয়েছে।

সব দিক বিবেচনা করে ২০০০ সালের দিকে ভারতে লাল চন্দন কাটা, বিক্রয় এবং রপ্তানিসহ সকল প্রকার কারবার নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশে পাচার শুরু হয় লাল চন্দন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০১৮ সালে এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করেছে। এক সময় এতই গাছ কাটা হয়েছে যে আর মাত্র ৫ শতাংশ লাল চন্দন গাছ ভারতে অবশিষ্ট রয়েছে বলে জানা যায়।