আজহারুল ইসলাম: যে কোন দেশের সংবিধানে স্বীকৃত এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য অধিকারসমূহকে মৌলিক অধিকার বলে। প্রকৃত পক্ষে সকল মৌলিক অধিকারই মানবাধিকার(Human Rights)। অন্যদিকে মানবাধিকার হলো একজন নাগরিকের সেই সকল অধিকার যেগুলো একজন মানুষ হিসেবে সে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় সেই অধিকার গুলো ভোগ করতে পারে এবং দাবী করতে পারে।মানবাধিকার গুলো সহজাত, সার্বজনীন, চিরন্তন ও শ্বাসত।এগুলোকে বিক্রয় বা হস্তান্তর করা যায় না। জেকস মানবাধিকার সম্পর্কে বলেন, There are things which are owed to man because of the very fact that he is man.
যাই হোক, এখন আসি মূল আলোচনায়। বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে মাদক বিরোধী অভিযানে কমপক্ষে ১০০ জনের বেশি লোককে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই দেশের নাগরিক হিসেবে কতগুলো সুবিধা দেশের সব্বোর্চ্চ আইন সংবিধান কতৃর্ক তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছে। আচ্ছা, আমি মানবাধিকারের কথা বাদ দিলাম কিন্তু আমাদের সংবিধান কতৃর্ক যে সুবিধা একজন আসামী পেয়ে থাকে তাকে ত আপাতত সেই সুবিধাটা দিবেন আপনারা। এটা না করে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তাদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন। মাঝে মাঝে শুনা যাচ্ছে, ক্রসফায়ারের নামে নিরীহ কৃষকে হত্যা করা হয়েছে, আরেকবার পত্রিকায় দেখলাম, যে লোকটা মাদকের বিরুদ্ধে ছিলো , তাকেও হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে র সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৩ এ বলা হয়েছে, protection of right to life and personal liberty —–
এখানে বলা হয়েছে — কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার সাথে সাথে কি কারনে তাকে আটক করা হয়েছে সেটা জানাতে হবে এবং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে এবং আইন জীবির সহিত পরার্মশ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করারও সুযোগ দিতে হবে। এবং আরো বলা হয়েছে তাকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে হবে। এবং আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫ এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও নিরপেক্ষ আদালত কতৃর্ক বিচার করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাহার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। তাহাকে নিষ্টুর ও অমানুষিক কোন দন্ড দেয়া যাবে না। BLAST vs Bangladesh (55DLR 363) এবং Doctrine of presumption of innocenceঅনুযায়ী আমরা জানি একজন ব্যাক্তিকে আদালতের মাধ্যমে অপরাধ প্রমান না হওয়া পযর্ন্ত তাকে নিরপরাধ ভাবতে হবে।
মাদক বিরোধী অভিযানে যদি একটি নিরীহ ব্যক্তিও মারা যায় তাহলে সেই অভিযানের কোন মূল্য নেই। তাছাড়া, যারা মাদকের সাথে মানে মূল হোতা যানা তাদের বিচার না করে যারা মাদকটাকে হস্তান্তর করে তাদের বিচার হচ্ছে এবং যাদের অধীনে তারা কাজ করছে তাদের বিচার হচ্ছে না। আর যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের ক্রসফায়ার না করে যদি আইনের আওতায় এনে তাদের স্বীকারোক্তি জবানবন্দি নেয়া হয় তাহলে বড় বড় নেতাদের নাম উঠে আসবে। সেই ভয়েই কি তারা ত্রুসফায়ারেরর সিধান্ত নিয়েছেন কি না সেটাই দেখার বিষয়। আমাদের বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন সেটা আমরা সবাই জানি। নিম্ন আদালতের বিচারকদের সব ক্ষমতা মন্ত্রী পরিষদের হাতে এর মানে হচ্ছে বিচারকরা মন্ত্রীদের তেল মারতে প্রস্তুত থাকবে কারন প্রমোশন কিন্তু এখন তাদের হাতে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও আমার শ্রদ্ধেয় স্যার সাদেকুর রহমান তিনি ক্লাসে প্রায়ই একটা কথা বলেন যে, আসলে হোট হাট করে কোন উন্নয়ন সম্ভব না, উন্নয়ন করতে হলে আমাদের একটা সিষ্টেম Developed করতে হবে, যেটি বর্তমানে আমাদের দেশে খুবই প্রয়োজন।
আমি ও স্যারের কথা পুরোপুরি সহমত। আপনি যদি আমাদের সংসদের অদিবেশন গুলো শুনেন তাহলে দেখবেন, একজন member of parliamentary ভাষনের প্রথমে জাতির পিতা, তারপরও র নিজের প্রধানমন্ত্রীর গুনগান, তারপর রাষ্টীয় সফরের গুনগান, তারপর প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব, তারপর টাইটেল বলতে বলতে শেষ তারপর ১ মি. সময় অবশিষ্ট থাকে তার এলাকার কথা বলার জন্য। কেন আপনি জাতির পিতার নাম, প্রধানমন্ত্রীকে দুটি কথা বলে শেষ করে জনগনের কথা বলুন যারা আপনাকে নির্বাচিত করে এখানে পাটিয়েছে। আপনি সংবিধানের Independence of judiciary বলেন, নির্বাচন কমিসন বলেন, মৌলিক অধিকার বলেন, মানবাধিকার বলেন, সব কিছু কি সংদবিধান অনুযায়ী করা হচ্ছে। সংবিধান নামে মাত্র কিন্তু কাজে কলমে কতটুকু সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। রাষ্টপতি যেমন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া নিজে কোন কাজ করতে পারে না মানে হচ্ছে রাষ্টপতি পুতুলের ন্যায় তেমনি আমাদের সংবিধানও একটা পুতুল।
——আজহারুল ইসলাম, আইন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।