নেপালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের সঙ্গে প্রধান বৈমানিক আবিদ সুলতানের মরদেহও সোমবার দেশে আনা হয়েছে। স্বামীর মরদেহ গ্রহণ করতে হয়তো স্ত্রী আফসানা খানম যেতেন আর্মি স্টেডিয়ামে। কিন্তু তার যাওয়া হলো না। স্ট্রোকের পর দুই দফায় অস্ত্রোপচার শেষে আফসানা নিজেই এখন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার অবস্থা এতোই গুরুতর যে জীবন-মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণ থেকে তিনি আদৌ ফিরবেন কি-না তা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
এর আগে আবিদ সুলতানের মরদেহ ঢাকায় আনার আগেই বেশ কয়েকবার আফসানার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আফসানার মৃত্যু না হলেও তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। আফসানার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম জানান, রোববার সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে আফসানার চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিন দুপুরে তার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাত ১১টায় দিকে আবারও তিনি স্ট্রোক করেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে আবারও আফসানার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার ডায়াবেটিস ও কিডনিজনতি সমস্যা আছে। তিনি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ৭২ ঘণ্টা অতিক্রম না করা পর্যন্ত তার অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের আইসিইউর একজন চিকিৎসক জানান, জীবন রক্ষাকারী কৃত্রিম ভেন্টিলেটর মেশিনের সাহায্যে অপিজেন দিয়ে আফসানার শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের জটিল রোগীরা কৃত্রিম উপায়ে যতটুকু অপিজেন গ্রহণ করার কথা সে পরিমান তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না। অপিজেনের মাত্রা ৯০ ভাগের কম উঠানামা করছে। তার চোখের মনি বড় হয়ে আছে। মস্তিস্ক ঠিকভাবে কাজ না করায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আবিদ সুলতানের এক স্বজন জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে আফসানা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রথমে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, আবিদ সুলতান আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ কথা শুনে আফসানা একটু স্বাভাবিক হয়েছিলেন। কিন্তু পরদিন সকালে তারা আবিদের মৃত্যুর খবর দেন। এ খবর জানার পরই আফসানা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন।
আফসানার স্বজন শামীমা নার্গিস জানান, রোববার সকালে ফোন করে তাকে দ্রুত বাসায় যেতে বলেন আফসানা। তিনি বাসায় গিয়ে দেখেন, আফসানা কথা বলতে পারছেন না, হাত-পা নেতিয়ে পড়েছে। প্রথমে তাকে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।