নড়াইলে একজন অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় কার কতটুকু গাফিলতি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বুধবার (২৯ জুন) সচিবালয়ে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মহানবি (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলেন ওই কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। একই ধর্মের হওয়ায় তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময় তাদের পাশে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।
শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রশাসনের সামনে এ ঘটনা ঘটানোয় নড়াইলের ডিসি-এসপির বিচার দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
এ ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন আচমকা অনেক ঘটনা ঘটে যায়। এ ঘটনায় আমরা সত্যিই দুঃখিত, এ ধরনের একজন শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। আমাদের ডিসি-এসপি তাৎক্ষণিকভাবে যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, সেখানে এত মানুষের উত্তেজনা হয়েছিল আমরা যা শুনেছি। তারপরও আসল ঘটনাটা কি হয়েছিল সেটা জেনে আপনাদের জানাবো।’
তিনি বলেন, ‘মনে হয়েছে, উত্তেজিত জনতা এত বেশি একত্র হয়ে গিয়েছিল, সেখানে ডিসি-এসপির কিছু করার আগেই ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। প্রিন্সিপালকে জুতার মালা পরানোর ঘটনা আসলে দুঃখজনক।’
‘প্রিন্সিপালকে জুতার মালা পরানোর পর হঠাৎ করেই দেখছি, আমরা ফেসবুক নামক যন্ত্রে খুব বেশি নিজের কথা, অন্যের কথা প্রচার করে থাকি কিংবা লাইক দিয়ে থাকি। সেখানে আমরা বলবো…না জেনে না শুনে, নিজের কথা না বুঝে ফেসবুকে কোন উক্তি বা কমেন্টস না করার জন্য আমি পরামর্শ দেবো।’
নড়াইলে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে পুলিশ ছিল, এক্ষেত্রে পুলিশের কোনো দায় দেখেন কি না- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমি তো বলেছি কেউ কোনো দায়িত্ব অবহেলা করলে পুলিশ করুক কিংবা আমাদের জেলা প্রশাসক করুক কিংবা যেই করুক কিংবা কোনো জনপ্রতিনিধি করে থাকুক, সেখানে সবাই ছিল, আমি শুনতে পেয়েছি। সেখানে কার কতখানি গাফিলতি রয়েছে, সেই অনুযায়ী আমরা খতিয়ে দেখছি।’
সাভারে একজন শিক্ষককে খুন করার মতো ঘটনা ঘটেছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে কি বলব? যারা আমাদের শিক্ষা দেন তাদের যদি ছাত্র হত্যা করে- তাহলে আমাদের কতখানি নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে আপনারাই চিন্তা করুন! তবে আমাদের যেটা করণীয় সেটা করেছি, আমরা তার বাবাকে ধরেছি, শিগগির তাকেও ধরে ফেলবো এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। সামনে কোনো বিধি-নিষেধ আসতে পারি কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুরুতেই বলেছি আমরা এ সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা রেজুলেশন করে জানিয়ে দিয়েছি, কোরবানির হাট হোক, মসজিদ হোক যেখানে হোক, জনসমাগম যেখানে ঘটবে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনাটা দিয়েছে সেই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।’
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, সেতুর নিরাপত্তা বিষয়ে কী ভাবছেন- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি এটা আমাদের সড়ক বিভাগ চিন্তাভাবনা করছে। অন্যান্য সংস্থাও এটা নিয়ে আলোচনা করছে। আপনারা দেখেছেন পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে আমরা নতুন থানা ভবন করেছি। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ পুলিশ চলে গেছে। আমরা সব সময় সজাগ আছি যাতে কোনো নাশকতা কিংবা কোনো ঘটনা সেখানে না জন্ম নেয়।’