অদম্য মেধাবী ২ বোনঃ একজন হতে চায় ডাক্তার, অন্যজন কৃষিবিদ

:
: ১০ মাস আগে
সিদরাতুল মুনতাহা ও জান্নাতুল মাওয়া

সিদরাতুল মুনতাহার ও জান্নাতুল মাওয়া অদম্য মেধাবী দুই বোন। নানা প্রতিকূলতা মধ্যেও পড়াশোনা থেকে ছিটকে যায়নি। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। একজন হতে চায় ডাক্তার অন্যজন বিদেশ থেকে পিএইচডি করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হতে চায়। তাদের মেধা ও পরিশ্রমী অধ্যবস্যায় ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীরা।

 

সিদরাতুল মুনতাহার ও জান্নাতুল মাওয়ার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। বাবা কাজের সূত্রে তাদের বসবাস গাজীপুর সদর উপজেলার শিমুলতলী এলাকায়। তারা তিন বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে রাজশাহীতে। বাবা আব্দুর রহিম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারি ছিলেন। ২০২২ সালে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান৷ এরপর মা ফিরোজা আক্তার তাদের নানা প্রতিকূলতা মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন। তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেন বড় বোনের স্বামী।

সিদরাতুল মুনতাহার ও জান্নাতুল মাওয়া ছোটবেলা থেকে মেধাবী। পড়াশোনা প্রতি তাদের আগ্রহের কমতি নেই। সিদরাতুল মুনতাহার ছোটবেলায় ভর্তি হয় হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। কোরআনের হাফেজ হয়ে সরাসরি ভর্তি হয় চতুর্থ শ্রেণিতে। পর্দা করার কারণে স্কুলে না গিয়ে বাসাটা থেকে পড়াশোনা করে। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দুই বোন টালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।

 

এরপর দুই বোন ভর্তি হয় গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে। ভালোই চলছিল পড়াশোনা। নবম শ্রেণীতে ওঠার পর বাবার ক্যান্সার ধরা পরে। এরপর শুরু হয় তাদের কঠিন জীবন সংগ্রাম। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা গেলে আরও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে। তাদের প্রবল আগ্রহ এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় শুরু করে পড়াশোনা। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তারা গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এবার একাদশ শ্রেনীতে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এমন সাফল্যের পরও তাদের উজ্জ্বল মুখে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ছাপ।

জান্নাতুল মাওয়া বলে, ‘পড়াশোনা আমি কারও অনুরোধে করছি এমনটা না। আমি নিজেকে জানার জন্য, নিজের আগ্রহে পড়াশোনা করছি। আমাদের থেকে আমার মায়ের স্বপ্ন বেশি আমাদের নিয়ে। কোথায় ভর্তি হবো, কী করবো এসব নিয়ে চিন্তা করে সবসময়। একসময় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর চিন্তাটা পাল্টেছি। যেহেতু বাবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন, এজন্য আমি চাই কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। কৃষিবিদ হিসেবে জাপান থেকে ডিগ্রি নিয়ে কোনো একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হবো। জানি, এই স্বপ্নটা অনেক দীর্ঘ পথ কিন্তু অসম্ভব নয়। শুধু প্রয়োজন সাহস আর অর্থনৈতিক সাপোর্ট।’

 

সিদরাতুল মুনতাহার ইচ্ছে ডাক্তার হবে৷ মুনতাহা বলে, ‘পড়াশোনা কঠিন কিছু না৷ নিয়মিত পড়াশোনা করলে, প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন পড়লেই পড়াশোনা সহজ হয়ে যায়। আমি ছোটবেলায় মাদ্রাসায় ভর্তি হই, সেখান হতে হাফেজ হয়ে ভর্তি হই স্কুলে। আমার মা ও বাবা সবসময় উৎস দিতেন পড়াশোনার জন্য। বাবা সবসময় বলতেন ডাক্তার হতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে। এরপর বাবা ক্যান্সারে আক্তান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সেইসময় আমি দেখেছি, রোগীর তুলনায় ডাক্তার কম। বাবা হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলতেন— দেখ ডাক্তাররা কত পরিশ্রম করছে কিন্তু রোগীর চাপ বেশি। এরপর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ডাক্তার হবো। যেখানে মানুষের সেবা করা যায়, যেন বিনা চিকিৎসায় কোনো অসহায় কষ্ট না করে।’

ফিরোজা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে দুইজনেই মেধাবী। ওর বাবা মারা যাওয়ার সময় বলে গেছে, যত কষ্টই হোক; তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। তবে ওদের স্বপ্ন আর পড়াশোনার আগ্রহ আমাকে সাহস দেয়।’