নওগাঁয় সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানোর পর নিহত স্কুলছাত্র মোস্তাফিজ নিলয়কে (১৪) শনিবার বাদ জোহর জানাজা শেষে সদর উপজেলার হাসাইগাড়ি ইউনিয়নের কাটখৈর গ্রামে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। এর আগে সকালে তার স্কুল কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শহরের নওজোয়ান মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উঠতি বয়সের মেধাবী কিশোরের এ ধরনের মৃত্যুতে হতবিহ্বল এলাকাবাসী।
পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষক ও এলাকার সচেতন মহল এ অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন নিলয় ও তার বন্ধুদের। তাদের বক্তব্য, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণেই তাকে এভাবে জীবন দিতে হলো। নিলয়ের অপর দুই বন্ধু রাকিব হোসেন (১৫) ও সাদমান (১৫) এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
আর শিক্ষকদের দাবি, তাদের বখাটেপনাই কাল হয়েছে তাদের জন্য। এই বখাটেপনা থেকে সরে আসতে না পারলে কোনো শিক্ষার্থীই নিরাপদ নয়। তাই বখাটেপনা ঠেকাতে স্কুলে জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভা শুরু হয়েছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে। প্রশাসনসহ সমাজের সব সচেতন মহলকে বখাটেপনা নিরুৎসাহিত করতে কাজ করতে হবে।
নিলয় শহরের মাস্টারপাড়ার শিক্ষক দম্পতি আফতাব উদ্দিন মোল্লা ও মা সৌদিয়া আনোয়ারীর ছোট ছেলে। বাবা জেলার পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের এবং মা রানীনগর মহিলা ডিগ্রি কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। শহরের মাস্টারপাড়া মহল্লার একটি ভাড়া বাড়িতে তাদের বাস। গতকাল শনিবার সকালে তাদের বাসায় গিয়ে দেখা গেল, ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন নিলয়ের মা। বাবা নির্বাক। আহত রাকিব হোসেনের নতুন সুজুকি ১৫৩ সিসির জিক্সার মোটরসাইকেল নিয়ে তিন বন্ধু মিলে বাইপাস সড়কে রেসিং করার সময় পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে শুক্রবার ডান পা হারায় নিলয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিনই মারা যায় সে। এই মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য বাবাকে বাধ্য করেছিল রাকিব। আসবাবের দোকান চালিয়ে রাকিবের বাবা রানা হোসেন যে আয় করতেন, তাতে সংসার চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়ত। কিন্তু ছেলের জেদ আর আত্মহত্যার হুমকির কাছে নতিস্বীকার করে ধার করে রাকিবকে মোটরসাইকেল কিনে দেন রানা হোসেন।
কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসমত আলী বলেন, ‘রাকিবের ওজনের চেয়ে তিনগুণ বেশি ওজন মোটরসাইকেলের। ওই মোটরসাইকেল রাকিবের পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়। ওই দিনই বলে ছিলাম এই মোটরসাইকেল তোদের জন্য কাল হবে।’
স্কুলের শ্রেণি শিক্ষক আল মামুন বলেন, বয়োসন্ধির এ সময়টিতে ছেলেদের মধ্যে দুরন্তপনা ও অহমিকা কাজ করে। এ সময় তাদের বখে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এ ছাড়া শুধু নিলয়, রাকিব, সাদমান নয়, আরও অনেকেই আছে যারা স্কুলে আসার নাম করে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অলি-গলিতে আড্ডায় মেতে থাকে। তাই অভিভাবকদের উচিত এ সময় তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বলেন, শহরের স্বল্প প্রশস্ত রাস্তায় উঠতি বয়সী কিশোররা মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। ফলে পথচারীরা নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এসব কিশোরের লাইসেন্স নেওয়ার বয়স হয়নি। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তদারকির মধ্যে থাকা উচিত।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, এই ঘটনায় নিহত বা আহতদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।