কোচিং বাণিজ্য সংকটের পিছনে দায়ী আমাদের দ্রুত ধাবমান অর্থনীতি” – জিয়াউল হক

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

আজ ফেলো এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের অংশগ্রহণে “স্কুল কোচিং : পরিস্থিতি ও প্রস্তাবনা” র্শীষক নগরীর সেলিব্রেশন পয়েন্টে এক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে বর্তমান স্কুল কোচিং -এর পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবনা মাননীয় চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, বরিশাল মহোদয়ের কাছে তুলে ধরতে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা – ২০১২” ব্যবহারিক পরিস্থিতি ও উত্তরণে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উক্ত বৈঠকে অংশ নেন প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, অভিভাবকগণসহ অন্যান্য। অনুষ্ঠানে প্যানেল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর মু. জিয়ায়ুল হক, চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, বরিশাল; ইমানুল হাকিম, সাবেক অধ্যক্ষ ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল; শাহ সাজেদা, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিজিওনাল কোঅর্র্ডিনেটর দিপু হাফিজুর রহমান।

বৈঠকের শুরুতেই “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা – ২০১২” পাঠ করা হয়। আলোচনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে স্কুল-কোচিং -এর বর্তমান পরিস্থিতি বিভিন্ন আঙ্গিকে ও প্রেক্ষাপটে। কোচিং বাণিজ্যের পক্ষে-বিপক্ষে ফুটে ওঠে নানান মত। যদিও সকলে নিয়ন্ত্রিত আকারে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য কোচিং -এর প্রয়োজনকে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু কোচিং বাণিজ্যের ও শিক্ষাকে পণ্য করে তোলার বিপক্ষে কন্ঠ তোলেন সকলে।

আপাদত কেবল শুক্রবার সকল কোচিং বন্ধের এবং শ্রেণীকক্ষে ফলপ্রসূ পাঠদানের আহ্বান জানান প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি সাইফুর রহমান মিরণ। সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন খন্দকার বলেন, তিনি এমন কোচিং চান যেখানে শিশুকে মানবিক করে গড়ে তোলা হবে।

২০১২ সালের নীতিমালাকে গেজেট আকারে পাশ করে আইনে পরিণত করার প্রস্তাব দেন এক আইনজীবি। কোমলমতি শিশুদের উপর কোচিং বাণিজ্যের কুপ্রভাব তুলে ধরেন সকলে। তারা নীতিমালার সুষ্ঠু প্রণয়নে সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা ও নীতিমালা লঙ্ঘনে উল্লেখিত শাস্তির প্রয়োগ করার দাবী জানান । উঠে আসে শীট বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়। ভর্তি পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে বিদ্যমান অসুস্থ প্রতিযোগীতা নিয়ে উৎকন্ঠা ব্যক্ত করেন অনেকে।

এ সংকটের সমাধানে সকলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। ফেলো এলামনাই এ্যাসোসিয়েশনে -এর পক্ষে জেলা যুবদল সভাপতি পারভেজ আকন বিপ্লব এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিলন ভূইয়া অভিভাবকদের সতর্ক করে তোলায় কার্যক্রম পরিচালনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ইমানুল হাকিম, সাবেক অধ্যক্ষ ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে ছদ্ম আকাঙ্খা তৈরি হচ্ছে কোচিং নিয়ে। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, বরিশাল -এর চেয়ারম্যান কে আহ্বান জানান, তাদের মত অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ শিক্ষকদের এ অবস্থার উত্তরণে কাজে লাগানোর জন্য। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শাহ সাজেদা বলেন, ১৯৭৫ -এর পর হতে ধীরে ধীরে শিক্ষা বাণিজ্যে রূপ নিতে শুরু করে। তিনি অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

প্রফেসর মু. জিয়ায়ুল হক বলেন, আমরা কিছু বিষয়ে ভুল ধারণা ছড়াই। যেমন সবাই জিপিএ ৫ পায়। কিন্তু ১০০ জনে আড়াই জন শিক্ষার্থী মূলত জিপিএ ৫ পায়। তিনি এই কোচিং বাণিজ্য সংকটের পিছনে দায়ী করেন আমাদের দ্রুত ধাবমান অর্থনীতিকে। যার ফলে শিক্ষা বাজারের পণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে ছাত্র শিক্ষকের মাঝে পণ্যের বিনিময় চলে এসেছে। তিনি সকলকে আহ্বান জানান, যার যার জায়গা থেকে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।

উল্লেখ্য যে, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল -এর এসপিএল প্রকল্পটি ইউএসএআইডি এবং ইউকেএইড -এর যৌথ সহায়তায় পরিচালিত।