৯২ বছর বয়সেও ক্যারিশমাটিক মাহাথির

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

৯২ বছর বয়সেও ক্যারিশমাটিক মাহাথির জানালেন তার গোপন রহস্য। গত জুলাই মাসে ৯২ বয়সে পা রেখেছেন অাধুনিক মালয়েশিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা তুন মাহাথির। এই বয়সেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। মেনে চলছেন কঠোর নিয়ম-নীতি। তবে এখনই তিনি অবসর গ্রহণের কথা ভাবছেন না।

মালয়েশিয়ার রাজনীতির এই প্রাণপুরুষের মুখাবয়বে বয়সের খুব বেশি ছাপও ধরা পড়ে না। তিনি আগের চেয়ে আরো বেশি সক্রিয়। নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন। এক সময় নেতৃত্ব দেয়া নিজ দলের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এমনকি বিক্ষোভ ও মোমবাতি আলোতেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।

২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর নেয়া সত্ত্বেও তিনি বলেন, ‘আমি আসলে কখনোই অবসর নেইনি।’ এই নিত্য কার্যকলাপ তাকে মানসিকভাবে সতর্ক থাকতে সহায়তা করেছে এবং গত তিন দশক ধরে নিজের ওজন ৬২ থেকে ৬৪ কেজির মধ্যে বজায় রেখেছে। এর মধ্যে কী গোপন রহস্য আছে?

দ্য সানডে টাইমসকে মাহাথির বলেন, সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বানরকে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ খাওয়ানোর ফলে এটি তাকে দীর্ঘজীবন লাভে সহায়তা করেছে। মাহাথির বলেন, ‘হয়তো আমিও একটি বানরের মতো। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ নই। আমার হার্টেও সমস্যা ছিল। এক সময় আমার অল্প নিউমোনিয়া ছিল এবং নিয়মিতভাবে খারাপ কাশির কারণে ফুসফুসের সংক্রমণ হতো।’

তিনি বলেন, ‘আমি ধূমপান করি না, আমি মদ পান করি না, আমি অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করি না। আমাকে সচল রাখতে যতটুকু খাবার প্রয়োজন আমি ঠিক ততটুকু খাবার খাই।’ একটি নির্দিষ্ট বয়সে মানুষদের মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের একটি বড় পেট রয়েছে এবং নিজেদেরকে সন্তুষ্ট করতে তারা মদ পান করে এবং অতিরিক্ত খাবার খেয়ে থাকেন, যা তাদের হার্টের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি গত কয়েক বছর যাবৎ শরীরকে ৬২ থেকে ৬৪ কেজির মধ্যে রেখেছি। আজ থেকে ৩০ বছর আগে বানানো পোশাক আমি আজও পড়তে পারি।’

যদিও ১৩ বছর আগে তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিদিনই অফিস করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সুস্থ থাকতে চাই, যাতে আমি এই কাজ করতে পারি। আমি ঘুমাতে এবং অবসর গ্রহণ করতে চাই এবং আমার পরকালের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই, আমার মনে হয় এটা খুবই স্বার্থপর!’

অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ১০ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী। জালিয়াতির মাধ্যম দিয়ে বেহাত হওয়া মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিলের (ওয়ানএমডিবি) বেশিরভাগ অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মাহাথির মোহাম্মদ।

মালয়েশিয়ার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য ২০০৯ সালে ওয়ানএমডিবি তহবিল গঠন করা হয়েছিল। ওই তহবিলে তিনশ’ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছিল। যার মাধ্যমে রাজধানী কুয়ালালামপুরকে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পাশাপাশি কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

ওই তহবিলের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে মালয়েশিয়দের প্রতারিত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে অন্তত একশ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি মামলাও হয়। মার্কিন বিচার বিভাগের দায়ের করা ওই মামলার কাগজপত্রে মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নাম উল্লেখ না করে ‘মালয়েশিয়া অফিসিয়াল ওয়ান’ বলা হয়।

ততদিনে অর্থ কেলেঙ্কারিতে মালয়েশিয়াও নাজিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। নাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওয়ানএমডিবি তহবিল থেকে ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থে নিজের পকেট ভারী করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ ওই সময় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

যদিও নাজিব শুরু থেকেই সব অভিযোগ আস্বীকার করে আসছেন। ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর মাহাথির তার এক সময়ের পছন্দের প্রার্থী নাজিবকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নাজিব ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় নিজের সাবেক দলের বিপক্ষে গিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে জোট বেধে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন বয়সের কারণে রাজনীতিকে বিদায় জানানো মাহাথির।

মাহাথিরের জনপ্রিয়তার জোরেই বুধবারের জাতীয় নির্বাচনে পাকাতান হারাপানের (অ্যালায়েন্স অব হোপ) বড় জয় পায়।
১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর গত ৬১ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা মালয়েশিয়ায় বারিসান ন্যাসিওনালের (বিএন) ভরাডুবি হয়। বিএন’র হয়ে ২২ বছর মাহাথিরই দেশ শাসন করেছেন।

দীর্ঘ ১৫ বছরের বিরতির পর ৯২ বছর বয়সে আবারও দেশের হাল ধরা মাহাথির বলেন, ওয়ানএমডিবি তহবিলের বেশিরভাগ অর্থ আমরা ফেরত আনতে সক্ষম হব বলেই আমার বিশ্বাস। আমাদেরকে প্রশাসনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতেই হবে।

নাজিবের হয়ে কাজ করা সরকারি সংস্থাগুলোয় পরিবর্তন আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, নির্দিষ্ট কয়েকজনের অবশ্যই পতন হবে। এরই মধ্যে সাবেক প্রধান মন্ত্রী নাজিব রাজাক এবং তার স্ত্রী রোশমাহ মনসুরকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সাধারণ জনগন বলছে স্বপ্নদ্রষ্টার কারিশমা শুরু হয়েছে। দেশের অর্থ ফিরিয়ে আনতে মাহাথিরকেই প্রয়োজন।