ক্ষমা চাইল জার্মানি। তবে তা দীর্ঘ ৮০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিন অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বরের কথা স্মরণ করে পোল্যান্ডের উইলান শহরে এসে ক্ষমা চাইলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ের।
১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর উইলানেই আঘাত হেনেছিল জার্মানির বিমান বাহিনী থেকে নিক্ষেপ করা প্রথম বোমাটি। হাজার হাজার মানুষ মারা যায় এতে। এই শহরটির সামরিক দিক থেকে কোনও তাৎপর্যও ছিল না। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস তৈরি করার উদ্দেশ্যে বেছে নেওয়া হয়েছিল আপাত-গুরুত্বহীন উইলান শহরকে।
‘ধ্বংসের সেই ভয়ঙ্কর স্পৃহার’ নিন্দা জানিয়েছেন স্টেইনমিয়ের। জার্মান ও পোলিশ দুই ভাষাতেই তিনি বলেন, ‘জার্মানির অত্যাচারের শিকার যারা, আক্রান্ত সেসব নাগরিকের কাছে নত মস্তকে ক্ষমাপ্রার্থী আমি।’ তিনি আরও বলেন, পোলান্ডে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে জার্মানরা। কেউ যদি মনে করে সে অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে বা যদি ভাবে ইউরোপে জাতীয়তাবাদী-সমাজতন্ত্রীদের সন্ত্রাসের রাজত্ব একটা সামান্য ঘটনা, তা হলে তাদের ভুল ভাঙাতে পারে জার্মানির ইতিহাস। আমরা কখনও ভুলব না। আমরা মনে করতে চাইব এবং অবশ্যই মনে রাখব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মর্মান্তিক আঘাত সহ্য করতে হয়েছে পোল্যান্ডকে। পুরো বিশ্বে এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছি পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৬০ লাখ ছিলেন পোলিশ নাগরিক। আর হলোকস্টে নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৬০ লাখ ইহুদি। এর অর্ধেকই ছিলেন পোলিশ নাগরিক।
৮০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও জার্মানি সেই ধ্বংস আর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করেনি বলে পোল্যান্ডের অভিযোগ রয়েছে। স্টেইনমিয়ের ছাড়াও উইলানে এসেছিলেন আরও অনেক দেশের নেতা-নেত্রী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা। তিনি তার দেশের ওপর নাৎসি-জার্মানির অত্যাচারকে বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রেসিডেন্ট দুদা বলেন, উইলান দেখিয়েছে যুদ্ধটা ঠিক কী রকম, একটা পুরোপুরি যুদ্ধ, কোনও নিয়মনীতিহীন, ধ্বংসাত্মক একটা যুদ্ধ। রোববার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর নিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বাকি নেতারা গিয়েছিলেন উইলান মিউজিয়ামে। দেখা করেছেন স্থানীয় সেইসব মানুষদের সঙ্গে, যাদের জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধে।
উইলানে হামলার পর নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারকে সেই মুহূর্তে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ব্রিটেন। জার্মানি সেই হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দেওয়ায় ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন এবং ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করে জার্মানির বিরুদ্ধে। সেই সংঘাত গড়ায় ছয় বছরের ভয়াবহতায়।
অন্তত ৪০ জন বিশ্বনেতা ইতিহাস স্মরণে এগিয়ে এলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো ব্যক্তিরা অনুপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ানের কারণ দেখিয়ে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টকে পাঠিয়েছেন। অপরদিকে পুতিনের কাছে কোনো আমন্ত্রণ পাঠানো হয়নি। যুদ্ধ-পরবর্তী সোভিয়েত আধিপত্যের ইতিহাস এবং ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রাইমিয়াকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রুশ-পোলিশ সম্পর্ক কখনোই স্বাভাবিক পথে হাঁটেনি।