২৫ টাকার ইনজেকশন ল্যাবএইডে ৬০ টাকা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের ফার্মেসিতে সোডিব ইনজেকশনের দাম প্রায় আড়াইগুণ বেশি। এ জন্য তাদের এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি একজন মুমূর্ষু রোগীর জন্য জেসন ফার্মা লিমিটেডের সোডিব (২৫ মিলি) ইনজেকশনটি কেনার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ওই রোগীর স্বজন ল্যাবএইডের ফার্মেসিতে গেলে সোডিবের দাম ৬০ টাকা রাখা হয়। অথচ ইনজেকশনের গায়ে ২৫ টাকা লেখা ছিল। দাম বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে ওই স্বজনকে ফার্মেসির দায়িত্বরত কর্মী জানান- ওষুধের সরবরাহ নেই। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মোড়কে যাই লেখা থাকুক দাম ৬০ টাকা নিলে নেন, না হলে অন্যকোথাও থেকে আনেন। এরপরই অধিদফতরে অভিযোগ করেন ওই রোগীর স্বজন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদফতরের কার্যালয়ে অভিযোগকারী ভোক্তা ও ল্যাবএইড কর্তৃৃৃপক্ষের শুনানি হয়। এতে ল্যাবএইডের অনিয়ম প্রমাণিত হয়। তাই ভোক্তা অধিকার আইনের দুটি ধারায় সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড অর্থাৎ এক লাখ টাকার জরিমানা করা হয়েছে ল্যাবএইডকে।

অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা  বলেন, সম্রাট নামের একজন ভুক্তভোগী ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে ওষুধের দাম বেশি রাখার অভিযোগ করেন। বিষয়টি অধিদফতরে অভিযোগ শুনানিতে প্রমাণিত হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ ও ৪৫ ধারায় ৫০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

আইনের ৪০ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

শাহনাজ সুলতানা আরও বলেন, ল্যাবএইড একটি স্বনামধন্য চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ওপর মানুষের রয়েছে আস্থা ও বিশ্বাস। সেই সরলতাকে পুঁজি করে তারা সাধারণ মানুষকে ঠকাচ্ছে। ওষুধের মোড়কে ২৫ টাকার দাম লেখা থাকা সত্ত্বেও ক্রেতার কাছে তারা রাখছে ৬০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির দাবি ওষুধ সরবারহ কম থাকায় তারা বেশি দাম রেখেছে। কিন্তু তাদের কম্পিউটারে মূল্য নির্ধারণ ছিল ৬০ টাকা। অর্থাৎ তারা পরিকল্পিতভাবে ভোক্তার কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে।

দাম বেশি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ল্যাবএইড হাসপাতালের কর্পোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার সাইফুর রহমান লেলিন বলেন, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি। বাজারে ওষুধটির সরবরাহ কম ছিল। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। তাই ক্রেতার কাছ থেকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখা হয়।

রোগীদের কম দামে ওষুধ সরবরাহের জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হাসপাতালে ৭ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু ল্যাবএইড রোগীদের কাছে ওষুধের দাম কম রাখার পরিবর্তে উল্টো ২০ শতাংশ বেশি নিচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী এমন অভিযোগ করেছেন কাছে।

এ বিষয়ে সাইফুর রহমান লেলিন বলেন, ‘ল্যাবএইড নির্ধারিত মূল্যে ওষুধ বিক্রি করে। ওষুধের দাম ২০ শতাংশ বেশি নেয়ার অভিযোগটি ঠিক নয়।’

ল্যাবএইডের ফার্মেসির ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভোক্তা অধিদফতর আমাদের ডেকেছিল। ওষুধের দাম বেশি রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ করেন একজন ক্রেতা। শুনানিতে আমরা বলেছি, ওষুধটি বেশি দামে কেনা, তাই দাম বেশি নেয়া হয়। আইন অনুযায়ী এটি ঠিক না। এটি আমাদের ভুল হয়েছে। বিষয়টি আমরা স্বীকার করেছি। অধিদফতর ৪০ ধারায় আমাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। পরে অধিদফতর থেকে আমাদের জানানো হয় জরিমানা এক লাখ টাকা।’

ল্যাবএইডের এমন অনিয়ম নতুন নয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১২ জুন ওষুধ প্রশাসনের (ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনুমতি ছাড়া দেশে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ওষুধ আমদানি ও বিক্রির অভিযোগে তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সময় ল্যাবএইডের ফার্মেসি থেকে ২৬ ধরনের প্রায় ৫ লাখ টাকার ওষুধ জব্দ করা হয়।

এ ছাড়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের অক্টোবরে হাসপাতাল ভবনের মূল নকশা না মেনে কার পার্কিংয়ের জায়গায় স্টোররুমসহ অন্য কাজে ব্যবহার করায় ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত।