রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে বাসায় ঢুকে দুই গারো নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে সঞ্জীব চিরান ও তার বন্ধু রাজু সাংমা ওরফে রাসেল।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি সঞ্জীব শুক্রবার ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দাবি করে, চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ার ভয়ে বন্ধুদের নিয়ে নিজের খালা ও নানিকে হত্যা করেছে তারা।
মামলার অপর দুই আসামি সঞ্জীবের বন্ধু প্রবীণ সাংমা ও শুভ চিসিম ওরফে শান্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার রাতে কালাচাঁদপুরের শিশু মালঞ্চ স্কুল গলির বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে সুজাতা চিরান (৪০) ও তার মা বেসেথ চিরানের (৬৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সুজাতার স্বামী আশীষ মানকিন গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে সুজাতার ভাগ্নে সঞ্জীব চিরান ও অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয়। পরদিন শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে ওই চারজনকে আটক করে র্যাব।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আটকের পর চারজনকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। এরপর তাদের জোড়া খুনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়। সঞ্জীব ও রাজু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও বাকি দুজনের কথায় অসংলগ্নতা থাকায় তাদের তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
জবানবন্দিতে সঞ্জীব বলেছে, আড়াই হাজার টাকা নিয়ে সে ও তার বন্ধুরা ঢাকায় বেড়াতে আসে। সঙ্গে আনা টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর দুই হাজার টাকার প্রয়োজন পড়ে। ওই টাকা জোগাড়ের জন্য বন্ধুদের নিয়ে খালার বাসায় চুরি করার ফন্দি আঁটে সঞ্জীব। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে নানি ও খালাকে হত্যা করে তারা। এরপর ভয়ে টাকার খোঁজ না করেই ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা। একজনের কাছে থাকা ৫০০ টাকা দিয়ে শেরপুরে পালায় তারা।
আলাদত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনাও দিয়েছে সঞ্জীব। তার পরিকল্পনাতেই এসব হয়েছে স্বীকার করে সে জানায়, সুজাতা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তারা বাসায় টাকা খুঁজতে শুরু করেন। নানি বেসেথ চিরান তা দেখে ফেলায় তারা ভড়কে যায়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বেসেথের পা চেপে ধরে রাজু ও প্রবীণ। শান্ত তার মুখে বালিশ চাপা দেয়। নানির মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সঞ্জীব।
সঞ্জীব ও রাজু জানায়, সুজাতা তাদের অপকর্ম দেখে থাকতে পারেন—এই ভয় থেকে তাকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সময় ঘুমন্ত সুজাতার মুখে বালিশ চেপে ধরে ছুরি দিয়ে তাকে কোপাতে থাকে তারা। খালার গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সঞ্জীব নিজেই।
গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) সালাউদ্দিন জানান, আসামিরা দুটি ছুরি সঙ্গে নিয়েই ওই বাসায় প্রবেশ করে। ঘটনার সময় বাসার একটি ছুরিও ব্যবহার করে তারা। পরে দুটি ছুরি বাসায় ফেলে পালিয়ে যায় তারা।