হ্যাকিং থেকে বাঁচতে ফেসবুকে যে তথ্যগুলো ভুলেও শেয়ার করবেন না

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বর্তমানে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ফেসবুককে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। সেলফি শেয়ার করা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কতকিছুই না শেয়ার করি আমরা।

কিন্তু ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ঘটনার পর হুমকি এবং প্রশ্নের মুখে পড়েছে জাকারবার্গের ফেসবুক। ফেসবুকের নিরাপত্তা নিয়ে এখন অনেকের মনে সংশয়, আতঙ্ক এবং অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ফেসবুকের দিন কি শেষ হতে যাচ্ছে? চিন্তার ভাঁজ অনেকের কপালে। অনেকে ফেসবুককে উড়িয়েও দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতার কারণে। তবে যদি একটু সতর্ক থাকেন তাহলে নিজেই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শক্ত নিরাপত্তা দিতে পারেন; যা হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা করবে।

তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই তথ্যগুলো:

১) যথন ফেসবুকে ব্যাক্তিগত তথ্য প্রকাশ করবেন তার আগে অব্যশই কয়েকটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। কোনোক্রমেই প্রকৃত নাম এবং ঠিকানা শেয়ার করবেন না। এতে ওঁত পেতে থাকা হ্যাকাররা সহজেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ফেলতে পারে। আরেকটা দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে, ফেসবুকে ব্যবহৃত ফোন নম্বর শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে আজেবাজে লোকের কাছ থেকে ফোন আসা তো শুরু করবেই সেই সাথে হ্যাকারও এই সুযোগ নিতে পারে।

২) ফেসবুকে বেশি বন্ধু পাতাও অ্যাকাউন্ট হ্যাক এবং ক্ষতি হওয়ার অন্যতম কারণ। এ সম্পর্কে অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউটের প্রফেসর রবিন ডানবার বলেছেন,‍ ‍পরিচয় হতে পারে অনেকেরই সঙ্গে। তবে একসঙ্গে ১৫০ জন পর্যন্ত বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যেতে পারে।

ডানবার পরীক্ষা করে দেখেছেন, ফেসবুকে তার বন্ধুদের মধ্যে ৪ দশমিক ১ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে তার ওপর নির্ভরশীল। আর ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মুখ দেখা যায় কেবলই তাদের প্রয়োজনে। তাদের আবেগ শেয়ার করার সময়ে। তিনি মনে করেন, এমন অপ্রয়োজনীয় বন্ধু এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো।

৩) ইদানিং দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের ছবি হরহামেশাই ফেসবুকে শেয়ার করছে। ফলে বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরেই বাবা-মায়ের ফেসবুকে ঢু মারার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাচ্ছে এবং আসক্তও হচ্ছে।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইন্সটিটিউটের আরেক প্রফেসর ভিক্টোরিয়া ন্যাশ বাচ্চাদের ফেসবুক চালানো নিয়ে বলেন, পরবর্তী সময়ে নিজেদের কী ধরনের তথ্য ফেসবুকের মাধ্যমে দেখতে আগ্রহী হবে বাচ্চারা ? এই প্রশ্নটা আগে প্রাসঙ্গিক ছিল না, কিন্তু আজ বেশ প্রাসঙ্গিক। কারণ, ফেসবুক আসক্তিতে বাচ্চাদের থাবা বসাচ্ছে ‘ব্লু হোয়েল’ এর মতো প্রাণনাশক কিছু গেম। এমন নয় যে, ফেসবুক ছাড়াও বাচ্চারা এইসব গেমের ব্যাপারে জানতে পারবে না। তবে ফেসবুক বাচ্চাদের মনে নতুনকে জানার খিদে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর সে থেকেই ঘটে যাচ্ছে বিপদ। এমনকী যৌন অপরাধীদেরও খপ্পরে পড়তে হচ্ছে বাচ্চাদের।

৪) আরেকটি বিপদজ্জনক কাজ হচ্ছে, ফেসবুকে লোকেশন সেট করে রাখা। এর ফলে হ্যাকাররা আপনার অবস্থান সম্পর্কে সহজেই বিশদভাবে জেনে যাবে। লোকেশন সেট করা জায়গায় আপনার বাড়ি বা কর্মস্থান নাও হতে পারে; কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করা হ্যাকারদের বাঁ হাতের খেল। আর যদি মোবাইল থেকে ফেসবুক অ্যাকসেস করেন আর লোকেশনও শেয়ার করেন তা হলে তো ৯ নম্বার মহাবিপদ সংকেত আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন, পরিবারের সঙ্গে বাইরে খেতে যাচ্ছেন, ক্রিকেট কিংবা ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাচ্ছেন-এ সব কিছুই জেনে ফেলছে ফেসবুক। পাশাপাশি যে হ্যাকারদেরও আমন্ত্রণ করছেন সেটা কি খেয়াল করেছেন?

৫) ফেসবুক থেকে অন্য কোনও পেজে ঢুকে কখনো কেনাকাটা করতে, কখনও আবার অন্য কোনও কাজে ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য দিয়ে ফেলেছেন কি? মনের ভুলেও   কখনো এমনটা করবেন না। কারণ ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিতে গিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা অনেক ঘটেছে।

৬) ভয়ঙ্কর ক্ষতিকরের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে বোর্ডিং পাসের তথ্য শেয়ার করা। কার‌ণ এই পাসের বারকোড নম্বর দিয়ে আপনার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জেনে নেয়া  হ্যাকারদের জন্য কঠিন কিছু না।