হিমালয়ের হিমবাহ গলছে, ভেসে যাবে ৫ হাজার হ্রদ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

উষ্ণায়নের ফলে গলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হিমবাহগুলো। গলছে হিমালয়ের হিমবাহগুলোও। আর অতি দ্রুত গতিতে হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে হিমালয় সংলগ্ন প্রাকৃতিক হ্রদগুলো ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গবেষকদের মতে, এই হারে হিমবাহ গলতে থাকলে আগামী এক দশকেই হিমালয়ের অন্তত পাঁচ হাজার হ্রদ ভেসে গিয়ে সৃষ্টি করতে পারে মহাপ্লাবন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পূর্ব হিমালয়ের হ্রদগুলো।

‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশ্ন রিসার্চ (এনসিএওআর)’-এর প্রধান মুথালাগু রবিচন্দন জানান, এই ভয়াবহ ভবিষ্যতের অশনি সংকেত দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে। যা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এ।

প্রাকৃতিকভাবেই হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক হাজার বিশালাকার প্রাকৃতিক হ্রদ। বিশালতার সঙ্গে সঙ্গে হ্রদগুলোর গভীরতাও অনেক বেশি। কিন্তু হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে সেই হ্রদগুলো বিপুল পরিমাণ পানির চাপ সইতে ব্যর্থ হবে। বরফ গলা পানিতে টইটুম্বুর হওয়া হ্রদগুলো ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি হিমালয়ের কোলে থাকা গ্রাম ও জনপদগুলোকেও নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। আর এটি ঘটতে পারে আগামী এক দশকের মধ্যেই। গবেষকদের অন্যতম জার্মানির পোস্টড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক জর্জ ভেহ্ ও অলিভার কোরুপ জানান, হিমালয় পর্বতমালার অন্যান্য অংশের চেয়ে এই ভয়াল বন্যার আশঙ্কা সিকিম হিমালয়সহ গোটা পূর্ব হিমালয়ে অন্তত ৩ গুণ বেশি।

পরিবেশ দূষণের ফলে যেভাবে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে উষ্ণায়ন, তাতে গত দুই-তিন দশক ধরেই দ্রুত হারে গলতে শুরু করেছে হিমালয় পর্বতমালার ‘গ্লেসিয়ার’ বা হিমবাহগুলো। হিমবাহের বরফ গলা পানির স্রোতেই আশপাশের মাটি ও নুড়ি পাথরগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে এসে হিমালয়ের কোলে ঐ প্রাকৃতিক হ্রদ তৈরি করেছিল। গত দশকে সিকিম হিমালয়ে তৈরি হয়েছে এমন ৮৫টি হ্রদ।

আগের একটি গবেষণা জানানো হয়েছিল, এই দশকেই হিমালয়ের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহের বরফের বেশিরভাগটা গলে যাবে। হিমালয়ের হিমবাহগুলির বরফ গলে যাওয়ার ফলে শুধু সিকিম হিমালয়েই ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে ৮৫টি সুবিশাল হ্রদের জন্ম হয়েছে। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, হিমবাহগুলো উষ্ণায়নের জেরে যেভাবে গলতে শুরু করেছে, তাতে বরফ গলা পানির তোড়ে হ্রদগুলোর পানিকে ঘিরে থাকা মাটি ও নুড়ি পাথরের দেওয়ালকে ভেঙে ভাসিয়ে দিতে পারে। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘মোরেন’।

অন্যতম গবেষক আরিয়েন ভাল্জ জানান, এর ফলে, এই দশকেই হিমালয় পর্বতমালার একটি বড়ো অংশে হতে চলেছে ভয়াল বন্যা। যাকে ভূতত্ত্ববিদ্যার পরিভাষায় বলা হয়, গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (জিএলওএফ বা গ্লফ)। সূত্র: আনন্দবাজার