হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ ও চাঁদপুর নদীতে মশারি জাল দিয়ে মাছের পোনা নিধন চলছে

লেখক:
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

রবিউল ইসলাম রবি, বরিশাল ব্যুরো ॥ বরিশালের হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ ও ঢাকা চাঁদপুর অংশে মেঘনা নদী সহ এর শাখা নদী ঘিরে ইলিশের অভয়াশ্রম। গত সরকারের আমলে হিজলা আ.লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নেতৃত্বে কয়েক হাজার নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ শিকার করা হতো। দলটি পতনের পর বর্তমানে হিজলা বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এই মাছ ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আ.লীগের মতই বর্তমানে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অবৈধভাবে মাছ ধরার বিরুদ্ধে প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে নামলে প্রায়ই তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার কারণ অনুসন্ধানকালে জানা গেছে- ইলিশের অভয়াশ্রম মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীরা গরীব জেলেদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে মাছ শিকারে পাঠান এবং বাধা প্রদানকারীদের প্রতিহত করার সুবিধা সহ মনবল দেন। যে কারণে মৎস্য কর্মকর্তাদের উপরও হামলা চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন দাদনদার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গরীব জেলেদের দিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় মেঘনা নদীতে,তেতুলিয়া ও কালাবদর নদীতে জাটকা শিকার করায়। মৎস্য কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করার সময় তাদের উপর হামলা চালিয়ে নদী ফাঁকা করে জাটকা শিকার করিয়ে থাকে। অভিযোগ আছে ভাষানচর, বাগরজা,মেহেন্দীগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকজন আছে যারা নেতৃত্ব দিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৎস্য শিকার করে থাকে তারা হলেন ভাষান চরের শহীদুল ঘরামি,দেলোয়ার হোসেন দিলু, কবির বাগ, আলমগীর হাওলাদার,এরা জেলেদের ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করে থাকে।তবে এরা সব সময়ে থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।এ বছর কঠোর অভিযানের কারণে পাই জাল দিয়ে মৎস্য শিকার করতে না পারায় জেলেদের দিয়ে হামলা চালিয়ে নদীতে মাছ শিকারের চিন্তা করছে।

এই অবৈধ ব্যবসায়ী হলেন- ভাষান চরের শহীদুল ঘরামী, দেলোয়ার হোসেন দিলু, মেম্বার কবির বাগ, আলমগীর হাওলাদার। দেশীয় মাছের প্রজনন বাড়াতে নিষেধাজ্ঞা দিলে জেলেদের কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে মৎস্য কর্মকর্তারা। নিষেধাজ্ঞা সফল করতে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে দাদন দারা উসকে দিয়ে জেলেদের দিয়ে হামলা চালাচ্ছে মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউই মুখ খুলতে পারে না। কবির বাগের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে বাগরজা ভাষান চর এলাকায় রোষানলে পড়তে হয় বলে অভিযোগ আছে।

সম্প্রতি ১৯ মার্চ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কালা বদর নদীতে মৎস্য শিকার করছে সেখানে মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে দুই জনকে। মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ্য করে অজ্ঞাত ৮৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে মৎস্য কর্মকর্তা। মামলার এজাহারে দেখা যায় শহীদুল ঘরামি,দেলোয়ার হোসেন দিলু ও কবির বাগের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে।

৩ মার্চ কালাবদর নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৎস্য শিকার করার সময় পালাতে গিয়ে জেলের মৃত্যু আর সেই মৃত্যুকে পুঁজি করে কবির বাগ,শহীদুল ঘরামি,দেলোয়ার হোসেন দিলু মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে স্থানীয়দের দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করে মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর হামলা করার ভয় দেখিয়ে কয়েক দিনে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার জাটকা শিকার করেছে।

তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে জেলেদের আটকের পরে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা আবার পুনরায় আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পরছে। বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন যদি নিষেধাজ্ঞা সময় অভিযানে আটকৃতদের যদি জরিমানা না করে জেল সাজা নিশ্চিত করা যেত তাহলে মৎস্য শিকার অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসবে।তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৎস্য শিকারিদের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।আর তা নাহলে জাতীয় মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মেঘনা নদীতে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনার সময় জেলেদের হামলার শিকার হয়েছিলেন ভোলা সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তাসহ সাতজন। মেঘনা নদীতে ইলিশের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে গত বছরের ১৮ অক্টোবর বরিশালের হিজলা উপজেলায় অভিযান চালানোর সময় ইউএনওর স্পিডবোটে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালান জেলেরা। এ ঘটনার সময় র‍্যাবের সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেহেন্দীগঞ্জে অভিযান চালাতে গিয়ে সংঘবদ্ধ জেলেরা নৌকা নিয়ে স্পিডবোটের ওপর উঠিয়ে দিয়ে হামলা চালান। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন ও আনসার সদস্য তুহিন মিয়া আহত হয়েছিলেন। এ সময় একজন আনসার সদস্যের সঙ্গে থাকা একটি শটগান নদীতে পড়ে খোয়া যায়।

অভিযুক্ত ভাষান চরের শহীদুল ঘরামী, দেলোয়ার হোসেন দিলু, মেম্বার কবির বাগ, আলমগীর হাওলাদারের মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কেউ আবার রং নম্বর বলে জানান।

উল্লেখ্য, সরকার মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞাদিয়ে নদীতে জাটকা সংরক্ষণ করেন। ১ মার্চ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলাসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদের অভয়াশ্রমটি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই। এখানে গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর দুই মাস নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মশারি জাল (পাই বা বেড় জাল) দিয়ে সকল প্রকার মাছের বাচ্চা ধ্বংস করে। নির্দিষ্ট কিছু মাছের পোনা সংগ্রহ করে অবৈধভাবে পাচার করেন।