স্কুটিতে পাঁচ কন্যার দেশভ্রমণ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে ভ্রমণপ্রেমী পাঁচ কন্যা স্কুটিতে চড়ে পুরো দেশ ঘুরে বেড়ানোর কর্মসূচি শুরু করেছেন। নারীর সুষ্ঠু ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ—ভ্রমণকন্যা’ নামে একটি ভ্রমণভিত্তিক সংগঠন এই কর্মসূচিতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। গতকাল সোমবার এই ভ্রমণকন্যা দলের পঞ্চম ধাপের কর্মসূচি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। এর আওতায় পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা পরিদর্শন করা হবে।

ভ্রমণ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ—ভ্রমণকন্যার প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাকিয়া হক। তাঁর সহযোগী সদস্যরা হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক মানসি সাহা তুলি, মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী শান্তা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের (সম্মান, চতুর্থ বর্ষ) শিক্ষার্থী শামসুন নাহার সুমা ও ঢাকার বিএএফ শাহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মুশফিকা রহমান নিঝুম।

ভ্রমণকন্যা দলের সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী পৌঁছে পটুয়াখালী কালেক্টরেট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর তাঁরা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পৌঁছে আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। বুধবার দলটি বরগুনায় একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তালতলী উপজেলার বৌদ্ধমন্দির, বেতাগী উপজেলার ঐতিহাসিক বিবিচিনি মসজিদসহ উল্লেখযোগ্য স্থান পরিদর্শন করবে। ৩০ আগস্ট পিরোজপুরের পেয়ারা বাগান, রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখে ভ্রমণকন্যারা ঝালকাঠি যাবেন। সেখানে গাবখান সেতুসহ অন্যান্য স্থান দেখবেন। এরপর তাঁরা স্কুটির চাকা ঘুরিয়ে বরিশাল পৌঁছে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বরিশালের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াবেন। ১ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের শকুনী দিঘি, মঠের বাজার, পর্বতের বাগান ঘুরে দেখবেন। শরীয়তপুর হয়ে ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে পঞ্চম ধাপের কর্মসূচির সমাপ্তি করবে দলটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ভ্রমণকারী দলের সদস্য শামসুন নাহার সুমা বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা সবাই শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করছি, পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী মানসিকতা নিয়ে সচেতনতামূলক কাজও করছি। দেশের নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের অভিজ্ঞতা ঢাকায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। আমরা মনে করি এই ভ্রমণের মাধ্যমে যে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে, তাতে পুরো দেশের নারী শিক্ষার্থীরা আরও বেশি জাগ্রত হবে।’

ভ্রমণ দলের অন্য সদস্যরা জানান, এর আগে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে তাঁরা নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নাড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলা সফর শেষ করেন।

দলটির প্রধান সমন্বয়ক সাকিয়া হক বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আমরা পুরো বাংলাদেশ ঘুরব। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের পুরো দেশ ভ্রমণ শেষ হবে। ভ্রমণকালে প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। এ সময় সড়ক নিরাপত্তা, বাল্যবিবাহ, মুক্তিযুদ্ধ, পর্যটন সম্ভাবনা, খাদ্য পুষ্টি, বিভিন্ন রকম সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, বয়ঃসন্ধিকালীন নানা সমস্যা, নারী স্বাস্থ্যের সচেতনতা, বিপদে নারী শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষার জন্য করণীয় বিষয়ে ধারণা দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়নে সুস্থ-সচেতন, উদারমনা নারী সমাজের কোনো বিকল্প নেই। সঠিক শিক্ষা আর ভ্রমণই পারে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে তাঁকে মানবসম্পদে পরিণত করতে।’