ঢাকা: ১৮ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার : মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে বাসে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে মালিকদের মর্জিমত ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুণে গুণে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়, সরকারী তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান, অপদস্থ করা, জোর জবরদস্থি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা, প্রতিবাদ করলে কোন কোন বাসে যাত্রীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনটি।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বার বার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ-চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলা মেতে উঠেছে। এতে বলির পাঠায় পিষ্ঠ হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। নানা অনিয়ম ও অযৌক্তিক, ভূয়া হিসাব দেখিয়ে তেলের দামের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে এখন রুটে রুটে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করে আরো ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের পায়ঁতারা করছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রী সমিতির নেতারা। অনতিবিলম্বে একচেটিয়াভাবে বাড়ানো গণপরিবহন ভাড়া বাতিল করে যাত্রী প্রতিনিধির সমন্ময়ে একটি ন্যায় ও গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ, বাসে বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করে তালিকা অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারের হস্থক্ষেপ কামনা করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকার জ্বালানী তেলে ৭ বছরে মুনাফা করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। সেটা টাকা দিয়ে ২০ বছর জ্বালানী তেলে ভর্তুকি দেওয়া যেত। পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে বহুগুণ বেশি দামে সড়ক, সেতু নির্মাণ ও বেশি দামে কেনাকাটার অর্থ যোগান দিতে তেলের দাম বাড়িয়ে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। তেলের দামের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে গিয়ে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠছে।
মানবাধিকার সংগঠক নুর খান লিটন বলেন, জোর জুলুমের মাধ্যমে আদায়কৃত বাড়তি ভাড়ার অর্থ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের কাছে চলে যায়। ফলে প্রতিনিয়ত খেটে খাওয়া মানুষের দূর্ভোগ দেখার কেউ থাকে না।
আজ ১৮ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ ও যাত্রীদের অপমান, অপদস্থ করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানীর সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘ জিম্মিদশার অবসানের জন্য ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল –
১. ডিজেলচালিত ষ্টিকার লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সাথে সাথে বিআরটিএ প্রণীত বাস ভাড়ার তালিকা বাসে বাসে স্থায়ীভাবে লাগানোর ব্যবস্থা করা।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিজান মালিক, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম-মহাসচিব এম. মনিরুল হক, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।