আরও এক বছর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান থাকছেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। তাকে এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
সোমবার (১২ জুলাই) রাষ্ট্রপতির আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা-৪৯ অনুযায়ী ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানকে তার অবসরোত্তর ছুটি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থগিতের শর্তে আগামী ৩১ জুলাই ২০২১ অথবা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ মে ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমানকে সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর সংস্থাটির দক্ষতা ও কার্যক্রমের উন্নয়নে যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি দায়িত্বে আসার পর অতীতের চেয়ে আরও বেশি কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হয় সিআইডিতে। বহুমুখী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বারবার ইতিবাচক আলোচনায় এসেছে সংস্থাটি। অর্থপাচার ও মানবপাচার প্রতিরোধ, সাইবার ক্রাইম ও প্রতারক চক্র দমনে গত এক বছরে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সিআইডি। বিশেষ করে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগকে আরও উন্নত করতে বর্তমান অতিরিক্ত আইজিপির নেয়া উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসনীয় হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কম সময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধী শনাক্তের সুযোগ বেড়েছে।
১৯৮৯ সালের অষ্টম বিসিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন তিনি। চাকরির বয়স শেষে ৩০ জুলাই তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান নোয়খালীর জেলার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যু্ক্তরাজ্যের লিংকনস ইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এলএলবি এবং পরের বছর ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান। এই পদে থাকতে তিনি সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইল জেলা পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার এসপি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন মাহবুবুর রহমান। এছাড়া পুলিশ সদর দফতরের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শাখায় সহকারী মহাপরিদর্শকও (এআইজি) ছিলেন তিনি।
২০১১ সালে মাহবুবুর রহমান পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১২ সালে তাকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) বদলি করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি পান এবং সিআইডিতেই থেকে যান। ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সিআইডির ডিআইজি ছিলেন।
সিআইডির অর্গানাইজিং ক্রাইমের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার তদন্তের তত্ত্বাবধানে ভূমিকা রাখেন। এর মধ্যে মানবপাচার প্রতিরোধ, অর্থ বিষয়ক অপরাধ, কাউন্টার টেরোরিজম স্কোয়াড, সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াড এবং বোম্ব অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ স্কোয়াডের পরিচালনার দায়িত্বপালন করেন। এছাড়া তিনি কাজের পরিকল্পনা ও গবেষণা এবং ক্রিমিন্যাল ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর কাজেও পারদর্শিতা অর্জন করেন।
২০১৩ সালের অক্টোবর মাহবুবুর রহমানকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার পদে পদায়ন করে সরকার। ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে বদলি হন। ২০১৫ সালের ৪ জুন তাকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি হিসেবে পদায়ন করা হয়। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন।
পরে মাহবুবুর রহমানকে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) হিসেবে পদায়ন করা হয়। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি-ইন্টারপোল শাখার প্রধান হিসেবে ২০১৯ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) এবং এনসিবি ইন্টারপোল শাখার প্রধান হিসেবে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির প্রধানও ছিলেন।
দেশে আয়োজিত অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইভেন্টেও ভূমিকা রেখেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের আয়োজনে দেশে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপ, অনূর্ধ্ব ১৮ এশিয়া কাপ হকি, প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল টুর্নামেন্ট, বাংলাদেশ-আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও টেস্ট ম্যাচেও তিনি পেশাদারিত্বের সঙ্গে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ মে তাকে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২০ সালের ৩ মে তাকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) হিসেবে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে তিনি এই পদেই দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করছেন।
মাহবুবুর রহমান বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে অ্যাঙ্গোলা এবং ১৯৯৯ সালে কসোভোতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্ব প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে বেস্ট ম্যান কাপ পদকে ভূষিত হন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অফিসার্স সারভাইভাল, নরওয়েতে জাতিসংঘের সিওই এবং বেলজিয়ামে শুটিং কোর্সে অংশ নেন। এছাড়া তিনি বার্লিনে ইন্টারপোলের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের সদর দফতরের সভায় যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নরওয়ে, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন পুলিশের বিচক্ষণ এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।