সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দুগ্ধপোষ্য সাত মাসের শিশু ফিরল তার মায়ের কোলে। সৈয়দ ইয়াসিন আব্দুল্লাহ নামের ওই শিশুকে রোববার বিকেলে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির খাস কামরায় শিশুটির মা তাসমিয়ার কথা শুনে এই নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে শিশুটির মা ও বাবার পক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে শিশুটির মা তাসমিয়া হাসানের আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দীকি, মোহাম্মাদ আলি আজম ও আইনুন নাহার সিদ্দিকা। আর শিশুটির বাবা মিতালী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান আব্দুল্লাহর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার।
চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল ব্যাংককে জন্ম হয় শিশুটির। এরপর এই দম্পতি স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় আসার পর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হলে একপর্যায়ে তাসমিয়া শিশু সন্তানকে নিয়ে গুলশানে বাবার বাড়িতে ওঠেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর টিকা দেয়ার জন্য ছেলেকে নিয়ে গুলশান ল্যাবএইড হাসপাতালে যান তাসমিয়া। সেখানে ছেলেকে দেখতে আসেন বাবা এহসান আব্দুল্লাহ ও দাদি। সেখানে তাসমিয়া, বাবা ও দাদির কোলে তুলে দেন শিশুটিকে। কিন্তু এক পর্যায়ে তাসমিয়াকে ফাঁকি দিয়ে বাবা ও দাদি শিশুটিকে নিজেদের বাসায় নিয়ে যান। এ ঘটনায় তাসমিয়া গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। প্রতিকার পেতে যান মহিলা পরিষদে। অবশেষে সন্তান ফিরে পেতে গত ২২ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন।
আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ অক্টোবর আদালত রুল জারি করেছিলেন। কেন ইয়াসিনকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তিনি জানান, সন্তানকে যেন প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য কাছে পান এবং বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন, সে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক একটি আবেদন যুক্ত করা হয় রিট আবেদনটিতে। কিন্তু আদালত তাসমিয়ার সে আবেদন খারিজ করে দেন।
এরপর তাসমিয়া একই আবেদন নিয়ে চেম্বার আদালতে যান। চেম্বার আদালত গত ৯ নভেম্বর আবেদনটি শুনানির জন্য আপিলের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিলে রোববার দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এর শুনানি হয়। একপর্যায়ে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ খাস কামরায় তাসমিয়ার কথা শোনেন। সেখানে উভয়পক্ষের আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী আইনুন নাহার বলেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছেই শিশুটিকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে রোববার বিকেল ৫টার মধ্যে শিশুটিকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিলে শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে শিশুটিকে মায়ের কোলে তুলে দেয়া হয়। আদালত বলেছেন, শিশুটির বাবা চাইলে তার সন্তানকে দেখতে যেতে পারবেন।