পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে ক্রমেই গ্রাস করছে সমুদ্র। ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটার মানচিত্র। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা হারাতে চলছে তার নিজস্ব জৌলুস। প্রতি বছর অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে সাগরে সৃষ্টি হয় বড় ঢেউ। ভয়ানক ঢেউগুলোর ঝাঁপটায় বালুক্ষয় সৈকতের পরিধি ছোট করে চলছে। ঝুঁকিতে আছে সৈকতের ট্যুরিজম পার্ক, কুয়াকাটা মাদ্রাসা পয়েন্ট বেড়িবাঁধ। এ নিয়ে পর্যটন এলাকায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আতঙ্কে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, কুয়াকাটার চৌমাথা থেকে মাত্র ২০০ ফুট বাকি আছে সমুদ্রে বিলীন হতে। স্থানীয় সংগঠনগুলো সৈকত রক্ষায় গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ করার দাবিতে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও টনক নড়ছে না প্রশাসনের। পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, সার্ভে চলছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়ার আগেই পর্যটকদের পদচারণার শেষ জায়গাটুকুও সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়া স্থানগুলোর মধ্যে সৈকত লাগোয়া নারকেল বাগানের ঐতিহ্য ও জাতীয় উদ্যান অন্যতম।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুই কিলোমিটার এলাকা চলে গেছে সাগরের ভেতরে। বালুক্ষয়ের শিকার হয়ে সীমানা প্রাচীরসহ পুরো বায়োগ্যাস প্লান্ট সরকারি ভবনটি এখন অদৃশ্য। অন্যদিকে সৈকত লাগোয়া অর্ধশত বছর আগের ফয়েজ মিয়ার হাজার হাজার নারকেল বাগান, তালবাগান, শালবাগান, তিনটি লেক, ঝাউবন , গঙ্গামতির স্পট লেম্বুরবন এসব বিলীন হয়ে গেছে আরো এক বছর আগে। এভাবে চলতে থাকলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এ সৈকত দ্রুত বিলীনের আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে সৈকত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছর মে থেকে পাঁচ মাস পূর্ণিমা-আমাবস্যার জোরারে সাগর ভয়ানকভাবে ফুঁসে ওঠে। এক একটা বিশাল ঢেউ এসে সজোরে আঘাত হানে সমুদ্রপাড়ে। উপকূলীয় অঞ্চল বালু এলাকা হওয়ায় ঢেউয়ের ঝাঁপটায় বালি সরিয়ে পশ্চিম দিকে মোহনায় নিয়ে যায়। এতে পাড়ের বিশাল অংশ ফাটল ধরে বিলীন হয়ে যায় সাগর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাগরের স্রোতের গতি পরিবর্তনের একটি গ্রোয়েন বাঁধ রক্ষা করতে পারে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে তাল গাছ, রেইনট্রি গাছ ও নারকেল গাছসহ নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ঢলে পড়ে সৈকতে। গত দুই মাসে প্রায় ৪০ ফুট পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে সাগর গর্ভে। এভাবে বালু ক্ষয় অব্যাহত থাকলে দ্রুতই কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ ভেঙে আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়বে।
ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত সৈকত এলাকা পরিদর্শনকালে সাক্ষাৎ হয় স্থানীয় বাসিন্দা ফেরেস্তালী খলিফা (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩৫-৪০ বছর আগে চার-পাঁচ মাইল দূরে সাগর পাড়ে শুঁটকির ব্যবসা করতাম। আর আজ বেড়িবাঁধে ঢেউয়ের সঙ্গে পানি আসছে। কী হবে কুয়াকাটার ভবিষ্যৎ। এখনো নজর দিচ্ছে না সরকার।
সি-বিচের চায়ের দোকানি রেজাউল করিম বলেন, ‘এ চায়ের দোহান দিয়া মোর সোংসার চলে। গত রাইতে দোহান বন্ধ হইর্যা বাড়ি যাই। বেইন্যা হালে (সকালে) আইয়া দেহি দোহানডা সাগরের চরে পইড়্যা রইছে। কত বচ্ছর ধইর্যা হোনতেছি সরকার কুয়াকাডার উন্নয়ন হরবে। এহন দেহি ভাঙলই ফিরাইতে পারছে না।’
এ বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ভারতীয় একটি বিশেষজ্ঞ টিম সৈকতের বালুক্ষয় রোধে কাজ করবে বলে আশা করছি। জিইও টিউব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বালুক্ষয় রোধ করা যেতে পারে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।