পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমানে ওয়াহাবিবাদকে সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হিসেবে দেখছে। অথচ তারাই এক সময় সমাজতন্ত্র ঠেকাতে এর প্রচারে উৎসাহিত করেছিল, দাবি সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের।
সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রে সফরে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেন তিনি। সংস্কার কর্মসূচিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়ে ওঠা ক্ষমতাধর যুবরাজ সালমান গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। আর ২২ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টকে সাক্ষাৎকারটি দেন।
এতে তিনি বলেন, গত শতকের ৭০ এর দশকে পশ্চিমারাই ওয়াহাবিবাদের প্রচারে সৌদিকে অর্থ ঢালতে অনুরোধ করেছিল। মুসলিম দেশগুলো যেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে চলে না যায়, সেজন্যই তারা এ অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধে বিভিন্ন দেশে মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ ঢেলে ওয়াহাবি মতাদর্শের বিস্তারে কাজ শুরু করে সৌদি আরব।
প্রিন্স সালমান আরও বলেন, ওয়াহাবিবাদের প্রচারে যেভাবে অর্থায়ন শুরু হয়েছিল, তা পরে আর সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। এখন সরকারের বদলে সৌদি আরবভিত্তিক বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই অর্থায়ন করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ জানায়, পরমতসহিষ্ণু সুন্নিদের উগ্র ওয়াহাবিবাদে দীক্ষিত করতে চার দশকে ১ হাজার কোটির বেশি ডলার খরচ করে সৌদি আরব। ১৯৭০ সাল থেকে যার শুরু। এই অর্থের ২০ শতাংশ আল কায়দাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যায়। এরপর ২০১৩ সালে ওয়াহাবিবাদকে বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হিসেবে আখ্যায়িত করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গোটা বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে উগ্র মুসলিম গোষ্ঠীগুলোতে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে মদদ জোগাত বলে অভিযোগ রয়েছে। ৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। ওই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আর এসব গোষ্ঠীর অধিকাংশই ওয়াহাবি (সালাফি) মতাদর্শে বিশ্বাসী।
মুসলিমদের প্রধান দু’টি ধারার অন্যতম সুন্নিদের মধ্যে ওয়াহাবিবাদের গোড়াপত্তন অষ্টাদশ শতকে। আরবের নজদ থেকে মোহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাব এর সূচনা করেন। ওয়াহাব ছিলেন বার শতকের ইবনে তায়মিয়াহ দ্বারা প্রভাবিত। আর তায়মিয়াহ মনে করতেন, রাষ্ট্র হবে ধর্মের অনুগামী। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন মুক্তমত চর্চার ঘোরবিরোধী।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে সৌদি আরব গঠন করে মসনদে বসে সউদ পরিবার। পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপে ক্ষমতায় আসার পর তাদের সঙ্গে ওয়াহাবিদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াহাবিদের উগ্রমত ছড়াতে থাকে।