কিছুদিন ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বে অ্যাপলের নতুন আইফোন নিয়ে নেতিবাচক গুঞ্জন ছড়িয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের অনেকে নতুন আইফোন আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, বেশি দামের নতুন আইফোনের চাহিদা কম থাকায় উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে অ্যাপল। সবচেয়ে বেশি কথা উঠছিলে অ্যাপলের কমদামি আইফোন সংস্করণ এক্সআর মডেলটি নিয়ে। অ্যাপল কর্তৃপক্ষ এবার ওই মডেলটি সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য দিয়েছে। অ্যাপলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, বাজারে ছাড়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া আইফোনের মধ্যে রয়েছে আইফোন এক্সআর।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের প্রডাক্ট মার্কেটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্রেগ জোসউইয়াক বলেন, বাজারে ছাড়ার পর থেকে আইফোন এক্সআর আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইফোন। অবশ্য, অক্টোবরে বাজারে আসার পর থেকে এ ফোনটি কত বিক্রি হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি।
অ্যাপল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছে, ডিসেম্বর মাস থেকে তাদের কোন মডেলের আইফোন কত ইউনিট বিক্রি হয়েছে, তা আর জানাবে না তারা। এর বদলে আইফোন থেকে আসা আয় সম্পর্কে জানানো হবে। আইপ্যাড ও ম্যাক ডিভাইসের ক্ষেত্রেও একই নীতি গ্রহণ করা হবে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে নতুন মডেলের তিনটি আইফোনের ঘোষণা দেয় অ্যাপল। কিন্তু তার আগে থেকেই আইফোনের সাশ্রয়ী মডেলের আইফোন ঘিরে নানা গুঞ্জন ছিল। কিন্তু আইফোন বাজারে আসার পর এর চাহিদা কমে গেছে বলে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোতে খবর প্রচার হয়। অ্যাপল এক্সআর মডেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে বলেও অ্যাপল ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো উল্লেখ করে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুরুতে আইফোন এক্সআর মডেলের দাম জাপানের বাজারে কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের টেলিকম অপারেটরদের ভর্তুকি দেবে অ্যাপল। দেশটিতে এখনো আইফোন ৮ মডেলটি জনপ্রিয়। নতুন করে বাজারে আসা আইফোন সেখানকার ক্রেতাদের মনে ধরেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাশ্রয়ী দামের আইফোন হিসেবে বাজারে আসা এক্সআর মডেলের চাহিদা কম। নতুন আইফোনের নির্মাতা ফক্সকন ও পেগাট্রনকে উৎপাদন কমাতে বলেছে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি প্রয়োজনে ছোট প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রেখেছে অ্যাপল। শুরুতে আইফোন এক্সআর মডেলের জন্য ৬০টি প্রডাকশন লাইন প্রস্তুত রেখেছিল ফক্সকন। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে ৪৫টি প্রডাকশন লাইনে কাজ হচ্ছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, এ বছর কমদামি আইফোন হিসেবে এক্সআর মডেলটি বাজারে এনেছে অ্যাপল। ৭৪৯ মার্কিন ডলার দামের ফোনটি প্রত্যাশার চেয়ে তিন কোটি ইউনিট কম তৈরি করবে অ্যাপল। শুরুতে ১০ কোটি ইউনিট আইফোন এক্সআর বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু চাহিদা না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসতে হয়েছে অ্যাপলকে।
প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের চোখে এবারের নতুন তিনটি মডেলের আইফোনে নতুনত্ব নেই। এর নকশা গত বছরে বাজারে আনা আইফোন এক্সের মতো। তবে এতে বিভিন্ন ফিচারের কারণে দামে পার্থক্য এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪ জিবি আইফোন এক্সআরের দাম ৭৪৯ মার্কিন ডলার। ১২৮ জিবি ও ২৫৬ জিবি এক্সআর কিনতে যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হবে যথাক্রমে ৭৯৯ ডলার আর ৮৯৯ ডলার। আইফোন এক্সএসের দাম শুরু ৯৯৯ মার্কিন ডলার থেকে। সাড়ে ছয় ইঞ্চি মাপের আইফোন এক্সএস ম্যাক্সের দাম ১ হাজার ৯৯ মার্কিন ডলার থেকে শুরু।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের আইফোনের চড়া দামের কারণে ক্রেতারা তা কিনতে পারছেন না। এর বাইরে বিশ্বজুড়েই স্মার্টফোনের বাজার কমেছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে আসার সংখ্যা ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ ওই প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বাজারে আসার হার ৩ শতাংশ কমেছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের করা মার্কেট মনিটর সার্ভিস প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মার্টফোনের বাজারের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। দুইয়ে উঠে এসেছে হুয়াওয়ে আর তিনে নেমে গেছে অ্যাপল। আইফোনকে ঠেকাতে অন্যান্য ব্র্যান্ডের ফ্ল্যাগশিপ ফোনেও ঝুঁকছেন ক্রেতারা।
স্মার্টফোন বাজার দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে এক্সআর মডেলের নেতিবাচক খবরের ভিড়ে এবারই প্রথম অ্যাপলের কোনো জ্যোষ্ঠ কর্মকর্তা আইফোন এক্সআর নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করলেন।