দেশে মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সোচ্চার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চলছে নিয়মিত অভিযান। এর ধারাবাহিকতায় মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সাথে সাথে ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। আবার কখনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকের গুলিতে প্রাণ যাচ্ছে এদের অনেককেই। যদিও বরিশালে জঙ্গি সদস্যদের কেউই এখন পর্যন্ত এমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অস্ত্রের ব্যবহার করতে হয়েছে। কিংবা বড় বা ছোট কোন ধরনেরই নাশকতার ঘটনা ঘটেনি এ অঞ্চলে। আর এর কারণ হিসেবে সুশীল সমাজ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ করে র্যাবের জোড়দার অভিযানিক ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে এ ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি থানাওয়ারী যে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে সে কার্যক্রম আরো বেগবান করা উচিত এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। যারমধ্য দিয়ে সমাজ থেকে মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কোনঠাসা হয়ে চিরবিদায় নিবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দক্ষিণাঞ্চলে মাদক-সন্ত্রাসের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর রয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি কৌশলি অভিযান তাদের একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছে। বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশালের দায়িত্বে থাকা র্যাব-৮’র তৎপরতায় গেলো ১২ মাসের অধিক সময়ে ১৯ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এদের মধ্যে জেএমবির দাওয়াতি ও সামরিক শাখা রসক্রিয় সদস্যও রয়েছে।
এছাড়া, গত ৮ জুলাই বরিশাল নগরের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের এক নারী সদস্যকে আটক এবং প্রেম-বিয়ের প্রলোভনে জঙ্গি সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত এক নারীকে উদ্ধার করে র্যাব-২। গত ৩১ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট থেকে আবু সালেহ ইমু (২২) ও শফিকুল ইসলাম সাইফ (৩১) নামে বরিশালের দুই যুবককে আটক করে তারা। এ দু’জনও আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
এদিকে, বরিশাল র্যাব-৮’র পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গুলোর সূত্র ধরে জানা গেছে, র্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে সবশেষ ১০ অক্টোবর দিবাগত রাতে মুলাদী উপজেলার দক্ষিণ কাজিরচর এলাকা জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) দাওয়াতি শাখার এক সক্রিয় সদস্য সালাউদ্দিন কাওসারকে আটক করা হয়। এরআগে গত ২২ সেপ্টেম্বর জেএমবির সক্রিয় সদস্য ফরিদপুরের নগরকান্দার মো. আব্দুল্লাাহ শরীফ (৩২) ও বরিশালের হিজলার জাকির হোসাইনকে (৩১) আটক করা হয়।
এছাড়া চলতি বছরের ২৩ আগস্ট জেএমবির দাওয়াতি শাখার সদস্য মাদারীপুরের শিবচরের মুফতি ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (৩২) এবং এর কয়েকদিন আগে বরিশালের মুলাদী থেকে সুলতান নাসির উদ্দিনকে (৩৯) আটক করা হয়। ২৫ জুলাই র্যাব-৮’র পৃথক অভিযানে ঢাকা থেকে জেএমবি সদস্য পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মো. আজিজুল হক আজিজ (২৫) ও শরিয়তপুরের জাজিরা থানার মুফতি আ. হাকিমকে (৩৭) আটক করা হয়। ১৭ এপ্রিল পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে জেএমবির দাওয়াতি শাখার সক্রিয় সদস্য বরগুনা জেলার আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুল কালাম ওরফে মুহুরি ওরফে নূরুল ওরফে নূরে আলম ওরফে নুরুকে (৪৫) আটক করা হয়। ২৭ মার্চ বরগুনা সদর থানাধীন টাউন হল এলাকা থেকে জেএমবির সক্রিয় সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ ওরফে বেলায়েত (৩৫) ও মো. হাসান মাহমুদ ওরফে হাসান ওরফে মাহমুদকে আটক করা হয়। ৬ জানুয়ারি বরগুনা জেলার সদর থানাধীন এলাকা থেকে আব্দুল আওয়াল সিরাজ (৫৪) ও আলী হোসেন ওরফে মাইনুদ্দীনকে (৪৫) আটক করা হয়। এর আগে, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বরগুনা জেলার সদর থানাধীন এলাকা থেকে জেএমবির সক্রিয় সদস্য মো. আল আমিনকে (২৮) আটক করা হয়। ২৮ নভেম্বর পিরোজপুর জেলার সদর থানাধীন পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে জেএমবির সক্রিয় সদস্য বাগেরহাট জেলার সদর থানাধীন পুরনো বাজার মেইন রোড এলাকার মো. নূরুল ইসলাম ওরফে নূরুকে (৪৫) আটক করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর বরিশাল নগরের জিয়াসড়ক এলাকা থেকে জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য বরগুনা জেলা সদরের আতিকুর রহমান ওরফে বাবু ওরফে শাওন ওরফে সাইফুল্লাাহ (২৪) এবং বরগুনা জেলার সদর থানাধীন এলাকা থেকে মো. মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল ওরফে হাসান (৩৫) ও আবু সালেহ সিকদার ওরফে আব্দুল্লাহকে (৩০) আটক করা হয়।
এর আগে, ২২ অক্টোবর মাদারীপুর জেলার সদর থানা এলাকা থেকে মোহাম্মদ মানিক ব্যাপারী (২৪) ও ১৭ অক্টোবর বরগুনা জেলা থেকে জেএমবির সামরিক শাখার সক্রিয় সদস্য মো. হাসান মোল্লাকে (৪০) আটক করা হয়। পরিসংখ্যান বলছে, র্যাব-৮’র হাতে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগ জেএমবি সদস্যদের বাড়ি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় ও তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির দাওয়াতি শাখার সদস্য। র্যাব-৮’র তৎপরতায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর সদস্যরা। তবে, র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, জেএমবির সদস্যরা সংগঠিত না হতে পারলেও তারা নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। চলমান অভিযানগুলোতে এ বিষয়টিই সামনে এসেছে।
র্যাব-৮’র উপ-অধিনায়ক মেজর খান সজিবুল ইসলাম বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ র্যাব বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একার সমস্যা নয়, এটা গোটা জাতির সমস্যা। র্যাব-৮ মাদক-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সবসময় তৎপর। ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেএমবির বেশ কয়েজন সক্রিয় সদস্য র্যাব-৮ এর অভিযানে ধরা পড়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে নতুনদের ধরা হচ্ছে। জঙ্গিরা যেন সংগঠিত হতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।
কাউকে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের সুযোগ নেই জানিয়ে এ র্যাব কর্মকর্তা বলেন, তথ্য পাওয়ার পরে তা যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্তের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আর, গ্রেফতার ব্যক্তিরা জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিজেরাই স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।