সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের নেপথ্যে ‘বিকাশ’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বিভিন্ন অপরাধী সংগঠনের আর্থিক লেনদেনের সহজ মাধ্যম  হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’। মোবাইল এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে রেমিট্যান্স প্রেরণ, অর্থপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন হচ্ছে।

অবৈধ এসব লেনদেন বন্ধে বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও কর্ণপাত করছে না প্রতিষ্ঠানটি। নানা অভিযোগে বিকাশের বিভিন্ন এজেন্টের লেনদেন স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে এসব এজেন্টের লেনদেন অনুসন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশে ব্যাংক।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭ এজেন্টের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জাগো নিউজকে বলেন, বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে বিকাশের বেশকিছু সন্দেহজনক এজন্টের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু এজেন্টের তথ্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অনুসন্ধানের জন্য দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু বিকাশ নয়, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। যদি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেন হয় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিআইডির মুখপাত্র ও অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিকাশসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তদন্ত শুরু হবে। তদন্ত শেষে যেসব মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানোর নামে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করছে বেশকিছু অসাধু চক্র। এ অর্থ আদায় হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

এদিকে দেশের জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। যার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকাশের লোগোসহ সাইনবোর্ড, ব্যানারে অর্থ লেনদেন হচ্ছে। যার কোনো অনুমোদন নেই।

বিএফআইইউ বলছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭ এজেন্টের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এজেন্ট কর্তৃক একই পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক হিসাব ৩০ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া পরবর্তী তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কয়েকটি (কতিপয়) হিসাবের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দেয়া হয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, বিকাশের মাধ্যমে অপহরণ, জঙ্গি অর্থায়ন, রেমিট্যান্সের (হুন্ডি) অর্থ বিতরণসহ বিভিন্ন অপরাধে অর্থ লেনদেনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিএফআইইউ প্রথম পর্যায়ে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে পাওয়া অনিয়ম, রেমিট্যান্স কমার পেছনের কারণ, বিকাশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বর্তমানে অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণ বিবেচনাধীন বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া চিঠিতে বিএফআইইউ বলছে, বেনামে, ছদ্মনামে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এক পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক ব্যক্তিগত হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বন্ধ করা গেলে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। অবৈধভাবে প্রেরিত রেমিট্যান্স মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিতরণ বন্ধ হলে বৈধ পথে বাড়বে প্রবাসী আয়। অপহরণ, জঙ্গি অর্থায়ন ও অন্যান্য অপরাধে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে গ্রহকের নিজ হিসাবের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জাগো নিউজকে বলেন, সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংককে তথ্য প্রদান করা হয়। সন্দেহজনক লেনদেনের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী দুই হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের লেনদেন সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।