নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ র্যাব-৮, বরিশাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পরথেকেই ডাকাত, জলদস্যু, বনদস্যু, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ী ও প্রতারক চক্রসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার, ট্রাফিক আইন নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এ ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই বিশেষ সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ও শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার ব্যাপারে র্যাব-৮ এর অভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সামনে দিনগুলোতে আরও বেশি সফলতা ও এলিট ফোর্স হিসেবে অর্জিত স্বকীয়তা ধরে রাখা এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার প্রতিদান দেয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন র্যাব-৮ এর কর্মকর্তারা।
র্যাব-৮ সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত ১৪ বছরে র্যাবের সক্ষমতা বেড়েছে অনেক। জঙ্গি দমন ছাড়াও নাশকতা প্রতিরোধসহ দক্ষিনাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে পুলিশের এ সংস্থাটি। মানব পাচাররোধ, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী ভূমিকা পালনে র্যাব ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের মনেও আস্থার প্রতীক হিসেবে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্যই বিশেষভাবে র্যাবকে এলিট ফোর্স হিসেবেই গঠন করা হয়েছে। র্যাব গঠনের পর থেকেই জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী দমন, মাদকবিরোধী অভিযানসহ বড় বড় অপারেশন পরিচালনা করছে র্যাব। ধারাবাহিকভাবে এগুলো নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে র্যাবকে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার মূল্যায়ন করে র্যাব সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বাহিনী সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদ দমন করছে। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা যেন মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠতে পারে তার জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে র্যাব। বিগত বছরগুলোতে র্যাব-৮ অপরাধীদের গ্রেফতার, প্রশ্নফাঁসরোধে জড়িতদরে গ্রেফতারে সাফল্য দেখিয়েছে। বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এবং শরীয়তপুসহ সকল জেলায় মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি না পায় তার জন্য বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক দ্রব্য সেবন বা বিক্রয়ের মাধ্যমে যাতে মানব জাতি ধ্বংস না হয় তার জন্য র্যাব কর্তৃক মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে যার স্লোগান দেওয়া হয়েছে “(চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে)”। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৮ কর্তৃক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল সংখ্যক মাদক জাতীয় দ্রব্য উদ্ধার এবং আসামী গ্রেফতার এবং এর বিরুদ্ধে আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
অভিযানের পাশাপাশি সকলকে মাদকের কুফল সম্পর্কে উদ্ধুদ্ব করার জন্য ‘মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন’ পরিচালনা করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাদক বিরোধী বির্তক প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হচ্ছে। সমাজের সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য র্যাব-৮ এর পক্ষ হতে এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রখা হবে বলে জানানো হয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবৎ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সংলগ্ন নদী বিধৌত অঞ্চলে একাধিক জলদস্যু/ডাকাত বাহিনী বিপুল সংখ্যক নিরীহ মৎস্যজীবি অপহরণ, মুক্তিপন আদায়সহ হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। বিগত সময়ে র্যাব-৮ এর ক্রমাগত অপারেশনে একাধিক জলদস্যু বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র গোলাবারুদসহ অসংখ্য জলদস্যু আত্মসর্মপন করেছে, উদ্ধার হয়েছে বিপুল সংখ্যক দেশী/বিদেশী অস্ত্র-গোলাবারুদ। বর্তমানে মৎস্য আহরণ মৌসুমে সুন্দরবনের মংলা, কয়রা ও শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে জলদস্যু/বনদস্যুরা পূর্বের ন্যায় আবারও যাতে সক্রিয় হতে না পারে সে জন্য জলদস্যুদের বিরুদ্ধে র্যাব-৮ কর্তৃক অপারেশন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জঙ্গী গোষ্ঠী সমূহ আগের মত শক্তিশালী অবস্থায় না থাকলেও গোপনে তারা যেন পুনরায় সংগঠিত হতে না পারে তার জন্য র্যাব-৮ সদা জাগ্রত। এর প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে র্যাব-৮,এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জঙ্গীর অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং এদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে তৎপরতা শুরু করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৮ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে জঙ্গী গ্রেফতার, উগ্রবাদী পুস্তক ও জীবন নাশক দ্রব্য উদ্ধার করেছে এবং এর বিরুদ্ধে অপারেশন কার্যক্রম অবাহত রেখেছে। র্যাব-৮, বরিশাল এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন সময় ইউনিয়ন নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, সিটি নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে র্যাব-৮ টহল মোতায়নের মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। সড়ক এবং নৌ পথে বর্তমানে দূর্ঘটনা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধমুলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জনসাধারণের জীবনযাত্রা অত্যন্ত দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। এ সকল দূর্ঘটনা ও অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য র্যাব-৮ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে লাইসেন্স/ফিটনেসবিহীন গাড়ী আটক ও জরিমানার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদ, বড়দিন, দূর্গাপুজা) এবং বিভিন্ন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন এবং অতিরিক্ত টহলে মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে র্যাব-৮ কাজ করে আসছে।
র্যাব-৮, বরিশাল কর্তৃক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদক এবং ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এই সকল অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৮, বরিশাল কর্তৃক বিপুল পরিমানে মাদক ও ভেজাল ঔষধ, খাদ্য পন্য, কারেন্ট জাল এবং আর্থিক জরিমানাসহ আসামী গ্রেফতার এবং এর বিরুদ্ধে অপারেশন কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র গ্রেফতার এর মাধ্যমে র্যাব-৮ সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের নকলের কুফল সম্পর্কে উদ্ধুদ্ব করার কাজ করে আসছে। উলেখ্য র্যাব কর্তৃক ২০১৮ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
র্যাব-৮ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি, মাদক বিরোধী অভিযান, জলদস্যু গ্রেফতার এবং জঙ্গি দমনের কার্যক্রম আপোষহীনভাবে কাজ করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে এবং আগামীতে অপারেশন পরিচালনা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।